মহাকাশ

শনির রহস্যময় উপগ্রহ টাইটানে ড্রোন পাঠাবে নাসা।

সৌরজগতের সবচেয়ে কৌতুহল জাগানিয়া উপগ্রহ খুব সম্ভবত শনির টাইটান। কেবলমাত্র টাইটানকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে অজস্র সায়েন্স ফিকশন বা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। কিন্তু এতকিছুর ভিড়েও শনির উপগ্রহ টাইটান নিয়ে মানুষের কাছে আজ পর্যন্ত খুব স্পষ্ট কোন ধারণা নেই। অবশ্য জ্ঞানের সেই পিপাসা মেটাবার লক্ষ্যে এবার কাজ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’। ২০৩০ সালে শনির টাইটানে ড্রোন পাঠাতে আগ্রহী নাসা এরইমাঝে কাজ শুরু করে দিয়েছে এর প্রস্তুতির জন্য। প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বা ৮০০ মিলিয়ন ইউরো।

শনির উপগ্রহ টাইটান পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বড় এবং ভরের দিক থেকে ৮০ শতাংশ বেশি ভারী। সৌরজগতের ২য় বৃহত্তম এই উপগ্রহের প্রতি নাসার বিশেষ আগ্রহের মূক কারণ এর রাসায়নিক গঠন। টাইটানের রাসায়নিক গঠন পৃথিবীতে জীবনের বিকাশ এবং উদ্ভব সম্পর্কিত গবেষণা আরো অনেকটা দূর এগিয়ে নিবে এমন ধারণা থেকেই মূলত চালানো হবে নতুন এই অভিযান। নতুন এই অভিযানের জন্য পৃথিবী থেকে ড্রন নিক্ষেপের সম্ভাব্য তারিখ ২০২৬ সাল। যা শনির টাইটানে গিয়ে পৌঁছুবে ২০৩৪ সাল নাগাদ।

টাইটানের আবহাওয়ার সুবিধা নিয়েই ড্রোনটি পুরো টাইটান জুড়ে এর গতিপথ নির্ণয় করে চলতে সক্ষম হবে। শনির উপগ্রহ টাইটানে পৃথিবীর মতোই বায়ু, পানি, সাগর এবং হ্রদের অস্তিত্ব থাকার কারণে একে নিয়ে বিজ্ঞানীদের কৌতুহল সেই প্রাচীন কাল থেকেই ছিল। যদিও এর বেশ চমকপ্রদ জলবায়ু একে কতটা প্রাণের উপযোগী করে রাখবে তা নিয়ে আছে সংশয়।

টাইটানের গড় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে ১৭৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা হিমাঙ্কের ২৯০ ডিগ্রী ফারেনহাইট নিচে। যার অর্থ এতে অবস্থিত পাহাড়সমূহ সম্পূর্ণ বরফে তৈরি এবং প্রচুর পরিমাণে থাকা মিথেন পৃথিবীর আবহাওয়াতে থাকা পানির ন্যায় আচরণ করছে। নাসা তাদের এই অভিযানের মাধ্যমে বরফে আচ্ছাদিত এই পরিবেশের স্বরূপ উদঘাটনের পাশাপাশি পৃথিবীতেও এর সম্ভাব্য গতি নির্ধারণের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে বলে জানিয়েছে এই মিশনের প্রধান গবেষক এলিজাবেথ টার্টল।

নাসার নিজস্ব ড্রোন ড্রাগনফ্লাই প্রথমএই অবতরণ করবে শনির ‘সাংগ্রি লা’উপত্যকায় যার ভৌগলিক গঠন একেবারেই দক্ষিণ আফ্রিকান দেশ নামিবিয়ার বিভিন্ন উপত্যাকার মতই। ‘সাংগ্রি লা’তে পর্যবেক্ষণ শেষেই প্রায় ৮ কিলোমিটার পর পর বিভিন্ন হ্রদ সদৃশ অঞ্চলে গবেষণার জন্য উপাত্ত সংগ্রহ করবে ‘ড্রাগনফ্লাই’।

প্রধান গবেষক এবং জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক এলিজাবেথ টার্টল বলেন, ‘টাইটানে ভ্রমণ পৃথিবী থেকেও অনেক কম কষ্টের’। বিবিসি কে দেয়া সাক্ষাতে তিনি জানান, ‘পৃথিবী থেকেও টাইটানে বায়ুমন্ডল চারগুণ বেশি পাতলা এবং এর মোট অভিকর্ষজ বল পৃথিবীর ৭ ভাগের ১ ভাগ মাত্র’।

ড্রাগনফ্লাইয়ের পরবর্তী গন্তব্য স্লেক ইম্প্যাক্ট আগ্নেয়পর্বতের জ্বালামুখে। টাইটান সম্পর্কিত গবেষণায় এই অঞ্চলটিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয় এখানে থাকা জলীয় উপাদান এবং কার্বন যৌগের অণুর উপস্থিতির কল্যাণে। নাসার প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের ডিরেক্টর লরি গ্লেজ বলেন, ‘পুরো অভিযানে আমার সবচেয়ে আকর্ষণের দিক এই স্লেক ইম্প্যাক্ট পর্বতের কাছে জলবায়ুগত উপাত্ত সংগ্রহের দিকটি। আমাদের কাছে এই অঞ্চলে থাকা কার্বন যৌগ, তরল পানি এবং মিথেন সবই আছে। আমার মতে, এখানেই প্রাণের বিকাশের জন্য আমাদের কাছে সব উপাদান পাওয়া সম্ভব’।

যদিও শেষ পর্যন্ত শনির এই উপগ্রহ মানুষের কৌতুহল কতটা মেটাতে সক্ষম হবে তা নিয়ে সন্দেহও বেশ জোরালো। ইতিপূর্বে মঙ্গল এবং বৃহস্পতি গ্রহেও তেমন সম্ভাবনার দেখা মিললেও তাতে খুব বড় কোন ফলাফল পায়নি নাসা।

Facebook Comments

Related Articles

Back to top button