বছরের প্রথম বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ আজ। খালি চোখে দেখলে চোখের ক্ষতির কারণ সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা জেনে নিন।

২১ জুন। বাংলাদেশ তো বটেই, পুরো উত্তর গোলার্ধেই সবচেয়ে বড় দিন। আর সেই দিনটাই কিনা সূর্য বেছে নিল চাঁদের আড়ালে মুখ লুকাতে। নেহাৎ কাকতালীয় ব্যাপার। তবু মজার তো বটেই। সূর্যগ্রহণ হর-হামেশা হয় না। আবার হলেও পূর্ণগ্রাস হয় না সব সময়। রোববারের সূর্যগ্রহণও পূর্ণগ্রাস নয়, বলয়গ্রাস। অর্থাৎ চাঁদের আড়ালে সূর্য পুরোপরি ঢাকা পড়বে না। যখন সূর্যগ্রহণের ষোলকলা পূর্ণ হবে, অর্থাৎ চাঁদের ছায়া পুরোটা ঢেকে যাবে, তখনও ছায়ার চারপাশে একটা উজ্জ্বল বৃত্ত দেখা যাবে। অর্থাৎ সূর্যটা তখন চাঁদের চারপাশে দেখা যাবে রিং বা বলয়ের মতো। এ কারণেই এ ধরনের গ্রহণের নাম বলয়গ্রাস।
বাংলাদেশ থেকে পূর্ণ বলয়গ্রাস গ্রহণ দেখা যাবে না। দক্ষিণ এশিয়ার এ অঞ্চলে আংশিক সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। বাংলাদেশে আংশিক সূর্যগ্রহণ শুরু হবে সকাল ১১ টা ২৩ মিনিটে, শেষ হবে পৌনে দুটোয়। সর্বোচ্চ গ্রহণ দেখা যাকে দুপুর ১টা ১২ মিনিটে। বাংলাদেশে সূর্যগ্রহণ শেষ হবে দুপুর ২টা ৫২ মিনিটে।

বছরের একটা সময় চাঁদ পৃথিবী আর সূর্য একই সরল রেখায় চলে আসে। তখন যদি চাঁদ পৃথিবী আর সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন সূর্যকে সরাসরি দেখা যায় না। চাঁদের পেছনে ঢাকা পড়ে সূর্য। যদি সূর্য সম্পূর্ণ ঢাকা পড়ে তখন সেটাকে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ বলে। পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব বা পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব সারা বছর এক থাকে না- বাড়ে-কমে। এ কারণেই কখনো বলয়গ্রাস, কখনো পূর্ণগ্রাস আবার কখনো আংশিক সূর্যগ্রহণ দেখা দেয়।

সূর্যগ্রহণের সময় অনেকেই অতি উৎসাহী হয়ে খালি চোখে গ্রহণ দেখার চেষ্টা করেন। সূর্যগ্রহণ তো বটেই, যে কোনো সময় সূর্যের দিকে সরাসরি তাকানো চোখের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই সরাসরি না তাকিয়ে ফিল্টার গ্লাস ব্যবহার করা যেতে পারে, ওয়েল্ডিং করার সময় মেকানিকরা যে ধরনের গ্লাস ব্যবহার করেন, সেটাও ব্যবহার করা যেতে পারে। আথবা প্লেটে বা যেকোনো পাত্রে পরিষ্কার পানি নিয়ে তাতে কিছু পরিমাণ গুড়ো হলুদ মিশিয়ে সেই পানিতে সূর্যগ্রহণের প্রতিবিম্ব দেখা যেতে পারে। সাধারণ সানগ্লাস বা চশমা পরে কেউ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাবেন না। টেলিস্কোপ বা ক্যামেরার সাহায্যে সূর্যগ্রহণ দেখতে হলে অত্যাধুনিক ফিল্টার ব্যবহার করতে হবে। তা নাহলে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি সরাসরি চোখের ওপর পড়ার সুযোগ পায়। সম্পূর্ণ অন্ধত্বসহ নানা রকম চোখের রোগ হতে পারে।
সূর্যগ্রহণের সময় কী করবেন?
* খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখা বিপজ্জনক। এজন্য বিশেষ ধরনের চশমা পরুন।
* করোনা আবহে হয়তো অনেকেই বিশেষ ধরনের চশমার ব্যবস্থা করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের ফিল্টার যুক্ত গ্লাস ব্যবহার করতে পারেন।
* এছাড়া, একটি শক্ত কাগজে সামান্য একটি ফুটো বা ‘পিন হোল’ বানিয়ে নিয়ে তা সূর্যের দিকে তাক করে ধরুন।
*কিছুটা দূরে একটি সাদা কাগজ রেখে দিন, সূর্যের ছায়া পড়বে এই কাগজের ওপর। সূর্যের প্রতিকৃতির আয়তন বাড়াতে শক্ত কাগজ এবং সাদা কাগজের মধ্যে দূরত্ব বাড়াতে পারেন।
সূর্যগ্রহণের সময় কী করবেন না?
* সরাসরি সূর্যের দিকে তাকাবেন না।
* সাধারণ সানগ্লাস ব্য়বহার করবেন না।
* জলে সূর্যের প্রতিচ্ছবি দেখবেন না।
* ল্যাম্পব্ল্যাক দিয়ে গ্লাস ঢেকে সূর্যগ্রহণ দেখবেন না।
সূর্যগ্রহনের সময় খালি চোখে সূর্যের দিকে তাকাতে বারণ করার কারণ
অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা আছে যে সূর্য গ্রহনের সময় ক্ষতিকর রশ্মি নির্গত হয়। বাস্তবে সূর্য থেকে প্রতিনিয়ত ক্ষতিকর রশ্মি নির্গত হয় হয়। অন্য সময় সূর্যের আলোর তীব্রতা বেশি থাকে বলে আমরা সূর্যের দিকে তাকাতে পারিনা। তবে তখনও ক্ষতিকর রশ্মি একই পরিমাণ নির্গত হয়। কিন্তু, সূর্যের আলোর তীব্রতা বেশি থাকায় আমাদের চোখের মনি স্বাভাবিকের তুলনায় ছোট হয়ে যায়। অনেকটা ক্যামেরার অ্যাপাচার এর মত। এ কারণে বাইরে রোদের মধ্যে থেকে হঠাৎ ঘরের ভিতরে আসলে আমরা কিছুক্ষণ অন্ধকার দেখি। কারণ বাইরে রোদে থাকার জন্য চোখের মণি ছোট হয়ে যায় (যেন কম আলো প্রবেশ করতে পারে এবং আমার তীব্রতা কম অনুভব করি) এবং ঘরে প্রবেশ করলে চোখের মনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে কিছুক্ষণ সময় লাগে। যেহেতু ঘরের ভেতরের আলো সূর্যের চেয়ে কম উজ্জ্বল তাই বাইরের রোদ থেকে ঘরে আসলে কিছুক্ষণ সময় আমরা ঘরের ভেতর অন্ধকার দেখি।
সূর্য গ্রহনের সময় যেহেতু চাঁদ সূর্যের সামনে চলে আসে, তাই পৃথিবী স্বাভাবিক রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের তুলনায় কিছুটা অন্ধকার হয়ে যায়। ফলে কম আলোর জন্য প্রাকৃতিক ভাবেই আমাদের চোখের মনি বড় হয়ে যায়, (বি.দ্র. : চোখের মনি কোন বস্তু নয় বরং এটি একটি ছিদ্র যা দিয়ে চোখে আলো প্রবেশ করে, এবং আলোর তীব্রতা অনুযায়ী চোখের মনি ছোট বড় হয়, আপনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এক চোখে টর্চের আলো ফেলে অন্য চোখ আয়নায় তাকিয়ে বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন) সূর্য গ্রহনের সময় যেহেতু চোখের মনি বড় হয়ে যায়, তাই স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে, একসাথে বেশি পরিমাণে ক্ষতিকর রশ্মি চোখে প্রবেশ করে। অর্থাৎ সূর্য গ্রহনের সময় সূর্য থেকে আলাদা কোন রশ্মি নির্গত হয় না। তবে এ সময় আপনার চোখের মনি বড় হয়ে যাওয়ায় রেটিনার ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়ে যায়।