হাবল স্পেস টেলিস্কোপ (Hubble Space Telescope)

বিজ্ঞানী গ্যালিলিও সর্বপ্রথম টেলিস্কোপের সাহায্যে আকাশ পর্যবেক্ষণ করে মহাকাশ সম্পর্কে মানুষের ধারনা পাল্টে দেন। তার এই ধারাবাহিকতায় প্রথম টেলিস্কোপ আবিস্কারের প্রায় চারশো বছর পরে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের বহু পুরনো প্রশ্নের উত্তর খুজতে আবিস্কার করা হয় হাবল স্পেস টেলিস্কোপ।
এই হাবল টেলিস্কোপের কারনে আমরা জানতে পেরেছি মহাকাশের সব অজানা অধ্যায়। শত শত বছর ধরে পৃথিবী থেকে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে বিজ্ঞানী এবং জ্যোতির্বিদেরা সমগ্র মহাবিশ্ব সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা লাভের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পৃথিবীতে স্থাপিত দূরবীক্ষণ যন্ত্র গুলোর নানা সীমাবদ্ধতা থাকার কারনে সেগুলো আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী যথেষ্ঠ তথ্য দিতে পারছিল না। তাই অনেকদিন থেকে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে একটি টেলিস্কোপ স্থাপনের চিন্তা ভাবনা করছিলেন।
হাবল টেলিস্কোপ নির্মান এর কাজ শুরু হয়েছিল নাসা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আরো দশ বছর আগে। অবশেষে ১৯৯০ সালের ২৪ এপ্রিল মহাকাশে পাঠানো হয় হাবল স্পেস টেলিস্কোপ। বিজ্ঞানী এডউইন হাবলের নামে এর নামকরণ করা হয়। কারন তিনিই সর্বপ্রথম প্রমাণ করতে পেরেছিলেন মহাবিশ্ব সম্প্রসারণ হচ্ছে।
১৯৯০ সালে ২০ মে হাবল টেলিস্কোপ তার প্রথম তোলা ছবিটি পৃথিবীতে পাঠায়। এরপর থেকে এই টেলিস্কোপটি লাখ খানেক ছবি পাঠিয়েছে পৃথিবীতে। আর সেসব ছবি বিশ্লেষণ করে জানা গেছে আমাদের না জানা অনেক তথ্য। হাবল টেলিস্কোপ এর তোলা একটি ছবিতে পাঁচ হাজার গ্যালাক্সি পর্যন্ত ধরা পরেছে, যা আমাদের পৃথিবী থেকে ১৩.২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে। এর সক্ষমতা আরও সহজ করে বলা যায়, টেলিস্কোপটি দিয়ে সাত হাজার মাইল দুর থেকে কোন জোনাকির আলো ক্লিয়ার দেখা যাবে।
এই টেলিস্কোপ এর একাধিক ছবি মহাবিশ্ব সম্পর্কে বহু বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছে। হাবল টেলিস্কোপের মাধ্যমে মহাবিশ্বের বয়স নির্ধারন, নতুন নতুন গ্যালাক্সি, গ্রহ, উপগ্রহ, ব্ল্যাকহোল , নিহারিকা সহ সুপার নোভা ডার্ক এনার্জির রহস্য উন্মোচন হয়েছে। Nasa, European Space Agency, Space Telescope Science Institute সম্মিলিত ভাবে হাবল টেলিস্কোপ পরিচালনা করে।
হাবল টেলিস্কোপ ভূপৃষ্ট থেকে প্রায় ৫৫০ কি.মি উপর থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। টেলিস্কোপটি ঘন্টায় প্রায় আটাশ হাজার কি.মি বেগে ছুটে চলেছে। টেলিস্কোপটির আকার ৪৩.৫ ফুট তার মানে এটির আকার একটি বাস গাড়ির সমান। হাবল টেলিস্কোপ মহাকাশে প্রেরণের পর ধারনা করা হয়েছিল এটি ১৫ বছর কার্যকর থাকবে। কিন্তু এটি প্রেরণের পর এটিকে পাঁচবার আপডেট ও মেরামত করা হয়। যার ফলে টেলিস্কোপটি এখনও তার মত কাজ করে যাচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের মতে হাবল আরও দশ বছর টিকে থাকবে। তারপর এটি আমাদের পৃথিবীর উপর আছড়ে পরবে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা হাবলের শূন্যস্থান পূরণের জন্য এর থেকে এডভান্সড টেলিস্কোপ মহাকাশে লন্চ করবে যেটির নাম জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। বিজ্ঞানীরা বলছে সবকিছু ঠিক থাকলে এই টেলিস্কোপটি এবছর অথবা আগামী বছরের মাঝে মহাকাশে পাঠান হবে। এটি হাবল থেকে তিনগুণ বড়। আর অধিক শক্তিশালী। যা দ্বারা হয়তবা মহাকাশের আরও অনেক অজানা রহস্য আমরা জানতে পারব। কিন্তু হাবল দিয়ে আমরা মানবজাতি এই মহাবিশ্বের অনেক কিছু জানতে পেরেছি, যা ভোলার নয়।