অন্যান্য

ড্রোন কী? ড্রোনের ইতিহাস এবং ড্রোন যেভাবে কাজ করে।

ড্রোনঃ

প্রযুক্তিগত পরিভাষায় ড্রোন হচ্ছে চালকবিহীন বিমান। ড্রোন বেশি অফিসিয়াল ভাবে চালকবিহীন বায়বীয় যানবাহন (ইউএভিএস) বা চালকবিহীন বিমান ব্যবস্থা (ইউসেস) নামে পরিচিত ।  মূলত, একটি ড্রোন একটি উড়ন্ত রোবট যা দূরবর্তী ভাবে তাদের  সিস্টেম সফ্টওয়্যার নিয়ন্ত্রিত ফ্লাইট প্ল্যানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত বা উড়তে পারে। তবে এটি বিমানের সেন্সর এবং জিপিএস এর সাথে কাজ করে ।

সাম্প্রতিক অতীতে, ড্রোন প্রায়শই সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত ছিল, যেখানে তারা বিরোধী বিমান লক্ষ্য চর্চা, গোয়েন্দা জমায়েত এবং তারপর আরো বিতর্কিত অস্ত্র প্লাটফর্ম হিসেবে প্রাথমিকভাবে ব্যবহার করা হত । ড্রোন এখন তল্লাশি ও উদ্ধার, নজরদারি, ট্রাফিক মনিটরিং, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ড্রোন ও ব্যবসায়িক ড্রোন-ভিত্তিক ফটোগ্রাফির পাশাপাশি ভিডিওগ্রাফি, কৃষি এমনকি ডেলিভারি সার্ভিসেও ব্যাপক পরিমাণে বেসামরিক ব্যবহার করা হয় ।

ড্রোন। ছবি সংগৃহীত

ড্রোনের ইতিহাসঃ

ড্রোনের ইতিহাসটা খুব মজার আর অদ্ভুত।
অস্ট্রিয়া থেকে যখন ভেনিস স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছিল, তখন ১৮৪৯ সালে ইতালির কাছে ড্রোনের ইতিহাস খুঁজে পেয়েছিলেন অনেকে । অস্ট্রিয়ান সৈন্যরা গরম বাতাস, হাইড্রোজেন বা হিলিয়াম ভর্তি বেলুন দিয়ে বোমা সজ্জিত করে ভেনিস আক্রমণ করে ।

প্রথম মানুষবিহীন বেতার নিয়ন্ত্রিত বিমান ব্যবহার করা হয়েছিল বিশ্বযুদ্ধে । ১৯১৮ সালে মার্কিন সেনাবাহিনী পরীক্ষামূলক ভাবে একটি চালকবিহীন ‘ফ্লাইং বম্ব’ বিমান তৈরি করেছে, যা কখনই মোকাবিলায় ব্যবহার করা হয়নি ।

১ম বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত ড্রোন

প্রথম ব্যবহৃত ড্রোন ডি হ্যাভিন্ড DH82B ‘কুইন মৌ’ বাইপ্লেনের একটি পূর্ণ আকারের পুনঃব্যবহার হিসেবে ১৯৩৫ সালে দেখা যায়, যা পেছনের সিটে রেডিও ও সার্ভার-চালিত নিয়ন্ত্রণসহ লাগানো ছিল। এই বিমানটির সামনের আসন থেকে একটি বিমান উড্ডয়ন করতে পারে, কিন্তু সাধারণভাবে এটি চালকবিহীন ভাবে উড়ে যায়।

২য় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত ড্রোন

এভাবেই ড্রোন প্রযুক্তির উৎপত্তি। আজকালের শুধু আমরা ড্রোনকে,  ড্রোন ক্যামেরা হিসেবে ভালোভাবে জানি। তবে এর ব্যবহার বহুবিধ।

ড্রোন কিভাবে কাজ করে?

ড্রোন যে প্রক্রিয়াই কাজ করে তার নাম হচ্ছে ইউএভি (UAV)। যার পূর্ণ অর্থ হচ্ছে Unmanned aerial vehicle। যার আছে ২ টি প্রকারভেদ, একটি সাধারণ (UAV) ও অপরটি সামরিক (UAV)। সাধারণ ইউএভি গুলোতে মুলত একটি ক্যামেরা, পাখা, আর কিছু সেন্সর থাকে। যা তাকে আকাশে উড়তে এবং সঠিক পথে যেতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই সাধারণ ইউএভি হোক আর সামরিক ইউএভি, সবাইকেই রিমোট দ্বারা চালনা করা লাগে। অপর দিকে সামরিক ইউএভি গুলোতে থাকে ককপিট, স্পাই ক্যামেরা, লেজার, জিপিএস, সেন্সর, লাইটিং সেন্সর ইত্যাদি। তবে এটার সমস্ত ইউএভি গুলো থাকে এর নাকের কাছে ও যার কারণে এরা অনেক বেশি দূরে যেতে পারে। আর এইগুলোর জন্য অবশ্যই একটা রানওয়ে দরকার। ড্রোন এর মূলত ২ টি অংশ থাকে একটি হচ্ছে ড্রোন নিজে ও অপরটি হচ্ছে এর কন্ট্রোলার সিস্টেম। গ্রাউন্ড কন্ট্রোলার নিজে নির্দেষ দেয় আর সেটা উপগ্রহ হয়ে ড্রোন এর কাছে যায়, ড্রোন তা গ্রহন করে সেই কমান্ড অনুযায়ি কাজ করে। ঠিক একই ভাবে ড্রোনও গ্রাউন্ড কন্ট্রোলার এর কাছে একই ভাবে তার তথ্য পাঠিয়ে থাকে। সব থেকে অবাক হবেন এটা শুনে যে এই কাজ গুলো করতে ড্রোন এর সময় লাগে মাত্র ২ সেকেন্ড।

তাছাড়া ড্রোন অনেক গুলো কমান্ড মেনে কাজ করে-

রাডার পজিসনঃ

রাডার পজিসন বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে রাডার পাইলট কে, এই পাইলট স্বয়ক্রিয় ভাবে নিজের অবস্থান নির্ণয় করে ও কন্ট্রোলার কে নিজের পজিসন সম্পর্কে অবগত করে। এর সাথে আছে আরেক টি কমান্ড ব্যাক টু হোম (Back To Home) এই কমান্ড এর মাধ্যমে ড্রোন টি যেখানেই থাকুক না কেন এটি তার নিজ অবস্থানে আবার ফিরে আসবে। কোন রকম কন্ট্রোল করা ছাড়াই। কিন্তু অব্যশই মনে রাখবেন এটা একমাত্র ব্যবহার হয় সামরিক ড্রোন বা UAV এর ক্ষেত্রে।

Gyro পজিসন সিস্টেমঃ

Gyro পজিশন সিস্টেম বলতে বুঝানো হয়েছে Gyroscope সাহায্যে নিজের ও অন্যান্য সব কিছুর পজিশন নির্ণয় করা। তাছাড়া এটির কারণেই ড্রোন সুন্দর ভাবে উড়তে পারে ও ঠিক ভাবে নামতে পারে। Gyro সিস্টেম কাজ করে উত্তর মেরু নির্ধারন করে, উত্তর মেরু কে প্রথমে ধরে এটি প্রথমে নিজের অবস্থান দিবে পরবর্তিতে অন্য ড্রোন বা Location তার কোন পাশে সেটা বলে। একটু কষ্ট হলেও এটি একদম সঠিক অবস্থান বলে দেয়। তাই সকল সামরিক ড্রোন বা (UVI) তে Gyro সিস্টেম ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ফ্লাই জোন প্রযুক্তিঃ

ফ্লাই জোন প্রযুক্তি বলতে বুঝানো হয়েছে অন্য বিমান বা ড্রোন সাথে এর কোন দূর্ঘটনা না হবার জন্য যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এটার কারণেই বিমান এর সাথে ড্রোন এর দূর্ঘটনা হয় না। আপনি একবার ভাবুন আপনি কখনো শুনেছেন বিমান এর সাথে কোন ড্রোনের দূর্ঘটনা হয়েছে? হয়নি বা হলেও খুব কম, এটির মূল কারণ হচ্ছে এই ফ্লাই জ়োন প্রযুক্তি। এটি মুলত কাজ করে দুই ভাবে একটি হচ্ছে এর ভিতরে আসপাশের বিমান বন্দর গুলোর সময় সূচি দেওয়া থাকে যার কারণে সেটি সেই সময় টাই নির্দিষ্ট দূরর্ত বজাই রেখে চলে ও একটি নির্দিষ্ট উচ্চাতাই চলাচল করে। অপর দিকে আরেক টি হচ্ছে ফার্মওয়্যার ব্যবহার করে A ও B নির্ণয় করে। কিন্তু এই সম্পর্কে কিছুই ড্রোন প্রস্তুত কারকেরা বলেনি।

FPV প্রযুক্তিঃ

FPV প্রযুক্তি হচ্ছে First Person View । ড্রোন প্রথমে মাটিতে যেই ব্যাক্তিকে দেখবে তাকেই আগে টার্গেট করবে। কিন্তু তার থেকে বেশি গুরুত্ব পূর্ন হচ্ছে এটি তে যে ক্যামেরা আছে সেটা মাটিতে অবস্থানরত যেকারো সুনিদিষ্ট তথ্য দিয়ে থাকে। কিন্তু এর সম্যসা হচ্ছে এটি বন বা গণবসতি পূর্ন এলাকাতে ঠিক ভাবে সনাক্ত করতে পারেনা। তাই FAV প্রযুক্তির বিকল্প হিসেবে অন্য কিছুর কথা ভাবথে বিশ্লেশকরা।

বর্তমানে ড্রোনকে এতটাই সুন্দর ও সহজ করা হয়েবছে যে ড্রোন কে আপনি স্মার্টফোন দিয়েও চালনা করতে পারবেন।

আধুনিক প্রযুক্তির বিমান সদৃশ ড্রোন

স্মার্টফোনে ড্রোনঃ

এখন বিশ্বটা হয়ে গেছে স্মার্টফোনের, তাই ড্রোন কেও স্মার্টফোনের মাঝে আনা হয়েছে। কিন্তু এটিমাত্র হবে Phantom 2 Vision+ quadcopter ড্রোন গুলোতে। আপনি গুগল প্লেস্টোর থেকে এটি ডাউনলোড করে ড্রোনকে চালনা করতে তো পারবেনি সাথে আপনি এর গতি কমানো বাড়ানো, ডাটা গ্রহন ও প্রেরণ, মিসাইল নিক্ষেপ ইত্যাদি কাজ গুলোও করতে পারবেন। এমনকি এতে আপনি ফ্লাইট মিশন এর সমস্ত ডাটা পরির্বতন করতে পারবেন। সুতরাং বলা যেতেই পারে ড্রোন কিন্তু আমাদের ব্যবহার এর জন্য অনেক সহজ হয়ে গেছে যদিও সেটা আমারা জানি না।

কি ধরনের ক্যামেরা ব্যবহার করা হয় ড্রোনে এই প্রশ্নটা কিন্তু আপনাদের আমাদের সবার, কেননা আমরা হয়তো ভেবে থাকি ড্রোনতো শুধু মাত্র শত্রু ঘায়েল করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু একটি বার ভেবে দেখেছেন যদি আপনি ভালভাবে শত্রুকে শনাক্ত করতেই না পারেন তাহলে ঘায়েল করবেন কিভাবে? সেই জন্যই ড্রোনে অনেক শক্তিশালি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অধিকাংশ ড্রোনে যে ক্যামেরা ব্যবহার হয়ে থাকে তাতে ১০৮০/৩০ ফ্রেমে ও ৭২০/৬০ ফ্রেমে অনেক ফুল এইচডি ছবি প্রর্দশন করে। আর যার জন্য ড্রোনের মাঝে আছে ৩ গিগাবাইট মাইক্রো এইচডি মেমোরি। কিন্তু সময় যত বাড়ছে এর ড্রোনের ক্যামেরাও তত আধুনিক হচ্ছে, Walkera, Yuneec এর মত বড় বড় ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান 4K ভিডিও ধারণ করা যাবে এমন ক্যামেরা এনেছে তাদের ড্রোনে ও ছবি তোলা হই ১২ মেগাপিক্সেল ক্যমারা দিয়ে। সর্বশেষ তারা Zenmuse Z3 জুম ক্যামেরা ব্যবহার করেছে যাকিনা নিকন তাদের ডিএসেলার ক্যামেরা গুলোতে ব্যবহার করে থাকে ও এটাই ড্রোনের ইতিহাসে প্রথম এমন হাই রেজুলেশন ক্যামেরা ব্যবহারের।

সামরিক ক্ষেত্রে ড্রোনের গুরুত্বঃ

ড্রোনের সবথেকে বড় সুবিধা হচ্ছে এরা কোন মিসাইল ছাড়ার পরে নিজের গতি পথ তখনি পরিবর্ত করতে পারে অনেকটা ক্রজ মিসাইলের মত। এদের মাঝে শুধু পার্থক্য এতটুকুই ক্রুজ মিসাইল নিজে ধ্বংস হয়ে যাই কিন্তু ড্রোন নিজে ধ্বংস হয়না। যেহেতু চালক থাকে না সেহেতু চালকের জন্য যে সমস্ত সুবিধা থাকা দরকার যেমন ককপিট, অক্সিজেন সিলিন্ডার, প্যারাসুট ইত্যদির ও দরকার পড়ে না। ফলে চালক বিহীন বিমান বেশী পরিমান গোলাবারুদ ,মিসাইল ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্র বহন করতে পারে। আর গোপনিয়তার কথা চিন্তা করলে এর বিকল্প ভাবা আমাদের উচিত না।

সাধারণের ব্যবহার্য ড্রোন।

সর্বশেষ টেকনোলজিক্যাল ড্রোনঃ

DJI Phantom 4 : যেটাতে রয়েছে যেকোনো ধরণের সংঘর্ষ এড়িয়ে চলার প্রযুক্তি। তাছাড়া এতে আছে আকাশ থেকে নিখুত ছবি তোলার প্রযুক্তি।

DJI Inspire 1 : এটি মূলত সবার কাছে প্রিয় হয়েছে এর সুন্দর ডিজাইন ও শক্তিশালি মোটর এর জন্য, এটিকে মূলত ব্যবহার করা ছবি তোলার জন্য। তাই এটি সিনেমার ভিডিও করার ক্ষেত্রেই বেশি ব্যবহার হয়।

3DR Solo : পেশাদার ফটোগ্রাফির জন্য এটি সবার পছন্দের শীর্ষে থাকবে, তাছাড়া খুবই দ্রুত নিজের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারাই এটা সবার থেকে একটু দ্রুতই কাজ করে।

আধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন

শেষকথাঃ

ড্রোন হচ্ছে বর্তমান যুগের সেরা আবিষ্কারের একটি যেটা আজ আমরা নিজের প্রয়োজন বলি বা নিরাপত্তা সব ক্ষেত্রেই ব্যবহার করি। তবে এটা সবথেকে বেশি ব্যবহার হচ্ছে যুদ্ধ ক্ষেত্রে, এই ড্রোনের জন্যই প্রতিপক্ষকে হামলার ছক থেকে শুরু করে হামলা করা পর্যন্ত সবকিছুই ড্রোন দিয়ে হচ্ছে। তাছাড়া হলিউড বা বলিউড এর সিনেমার অনেক স্ট্যান্ড ড্রোন দিয়েই করা হচ্ছে।

Facebook Comments

Related Articles

Back to top button