অন্যান্য

হ্যাকাররা হুডি পড়ে থাকে কেন

একজন হ্যাকারের ছবি কল্পনা করুন। দেখবেন হুডি পরা কারও ছবি মনে ভাসবে। যিনি কিনা আধো আলো আধো ছায়ায় বসে আছেন। সামনে একটি কিবোর্ড। মনিটর থেকে ০ আর ১ ছড়িয়ে পড়ছে। মুখোশে মুখ ঢাকা এবং তিনি একজন পুরুষ। হ্যাকারদের হুডি পড়ে থাকতে দেখা যায় কেন?

আপনার মন হ্যাক করে মনের কথা বুঝে ফেলেছি, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। টিভি অনুষ্ঠান হোক, চলচ্চিত্র হোক কিংবা সংবাদমাধ্যমের খবর, একজন হ্যাকারকে দেখবেন এভাবেই উপস্থাপন করা হয়।

কিন্তু হ্যাকাররা কি আসলেই সব সময় হুডি পরে থাকেন? শীত ছাড়া কি তাঁদের জীবনে আর কোনো ঋতু নেই? জীবনে কখনো কি তাঁদের পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে শ্বশুরবাড়ি থেকে ঘুরে আসতে ইচ্ছা করে না? নাহ্‌, প্রশ্ন বেশি হয়ে যাচ্ছে। চলুন আমরা উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

হ্যাকার কিন্তু নানা রকমের হয়। ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকাররা তথ্য চুরি করে তা থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। হোয়াইট হ্যাট হ্যাকারদের কাজ ঠিক উল্টো। তাঁরা যেকোনো সিস্টেমের নিরাপত্তাত্রুটি খুঁজে বের করে তা সংশোধন করতে বলেন। ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা বাড়াতে কাজ করেন। তবে আমাদের মনে কোনো কারণে সব হ্যাকারের একই ছবি গেঁথে গেছে। আর এর পেছনে গণমাধ্যমের প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই।

ক্যাসপারস্কি ল্যাবের প্রধান নিরাপত্তা গবেষক ব্রায়ান বার্থোলোমেউ ২০১৭ সালে সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ২০০০ সালের দিকে তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা খাতে কাজ শুরু করেন। তখন সংবাদমাধ্যম কিংবা হ্যাকারদের কমিউনিটিতে হুডি পরা হ্যাকারদের ছবি দেখা যেত না। তবে সময় যত গড়িয়েছে, হ্যাকিংয়ের খবরের সঙ্গে অলংকরণ হিসেবে বাইনারি সংকেতের ০ আর ১-এর ব্যবহার বাড়তে থাকে। সঙ্গে থাকে কি-বোর্ড আর তালার ছবি।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মার্ক রজার্স সিএনএনকে বলেছেন, গেল শতকের আশির দশক এবং নব্বইয়ের দশকের শুরুতে হ্যাকারদের ‘সাইবারপাঙ্ক’ হিসেবে উপস্থাপন করা শুরু হয়। সাইবারপাঙ্ক মূলত বিজ্ঞান কল্পকাহিনির একটি উপধারা, যাতে উচ্চপ্রযুক্তি ব্যবহার করলেও অনৈতিক জীবনধারার মানুষ দেখানো হয়।

মন্ডো ২০০০ সাময়িকীতে ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত ‘আর ইউ আ সাইবারপাঙ্ক?’ শীর্ষক নিবন্ধে হ্যাকারদের পায়ে ভারী বুট জুতা, চামড়ার জ্যাকেট এবং হাতে ফিঙ্গারলেস দস্তানা দেখানো হয়।

১৯৯৫ সালে ‘হ্যাকার্স’ নামের থ্রিলারধর্মী সিনেমা মুক্তি পেলে হ্যাকারদের কাল্পনিক ছবিতে কিছুটা পরিবর্তন দেখা যায়। তখন দেখা গেল হ্যাকাররা বয়সে তরুণ, স্কেটবোর্ড চালান, নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না। ইত্যাদি ইত্যাদি।

মার্ক রজার্স বলেন, হ্যাকারদের সাইবারপাঙ্ক হিসেবে দেখানো তা-ও তেমন খারাপ উপস্থাপনা ছিল না। তবে সেখানেই থামেনি গণমাধ্যম। ক্রমে আগের ছবি মুছে সেখানে স্কেটবোর্ডে চড়া কিশোরের ছবি জায়গা করে নেয়।

চলতি শতকের শুরু থেকে হ্যাকিং এবং সাইবার অপরাধের খবর সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব নিয়ে প্রকাশ হতে শুরু করে। ফলে অলংকরণেও বৈচিত্র্য দেখা যায়। একই সময়ে ফেসবুকের মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো চালু হয়। আর সে সময় থেকে মার্ক জাকারবার্গদের মতো হুডি পরা উদ্যোক্তাদের তরুণেরা আইডল হিসেবে দেখতে শুরু করেন।

বার্থোলোমেউ বলেছেন, গণমাধ্যমে নিজেদের উপস্থাপনা নিয়ে হ্যাকারদের কমিউনিটিতে প্রায়ই হাসিঠাট্টা হয়। তবে তাঁরাও ক্রমে হুডিকে একরকম ‘জাতীয় পোশাক’ হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করেন। নানা সম্মেলনে হ্যাকাররা নিজেদের লোগোযুক্ত হুডি পরে অংশ নিতে থাকেন।

গণমাধ্যমে হ্যাকারদের উপস্থাপনা বদলানো দরকার মনে করেন রজার্স। তিনি বলেছেন, হ্যাকারদের উপস্থাপনায় আড়ালে থাকা হুডি পরা চিত্র তাঁদের আরও ভীতিকর করে তুলছে এবং সেই ভুল ধারণা বদলানো দরকার। সঙ্গে আহ্বান জানিয়েছেন, হ্যাকারদের সম্পর্কে কাল্পনিক ধারণা তৈরির বদলে এসে দেখে যান তাঁরা কেমন।

Facebook Comments

Related Articles

Back to top button