অবাক বিশ্ব

প্রশান্ত মহাসাগরের আকাশে ইউএফও!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের অজ্ঞাত পরিচয় উড়ন্ত বস্তু (Unidentified flying object , ইউএফও) সম্পর্কিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলি প্রমাণ করেছে যে, রাতের আকাশে এখনো অনেক রহস্য রয়ে গেছে। জ্যোতির্বিদ্যায় মানবজাতির উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও অনেক উদ্ভট ও ক্ষণস্থায়ী ঘটনা অদেখা বা ব্যাখ্যাতীত থেকে যেতেই পারে। তাই যখন আকাশের বিচিত্র কোন ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, তা বেশ সন্তোষজনক বলে বিবেচনা করা হয়।

১৮ই জুন সন্ধ্যা ৬টার দিকে দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিউ ক্যালেডোনিয়া এবং ভানুয়াতুর আকাশে এমন একটি ব্যাখ্যাতীত ঘটনা দেখা যায়। এখানে বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী একটি সুন্দর এবং অদ্ভুত চক্র দেখতে পেয়েছেন। ক্যালেডোনিয়ান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশন তাদের ফেসবুক পোস্টে প্রতিবেদনটি সম্পর্কে বলেছেন:

“ইয়াত, থিও, লা টনটোটা এবং ভানুয়াতুর বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী এই আজব ঘটনাটি দেখেছে। আমাদের কাছে এই ঘটনার কোনও ব্যাখ্যা নেই, তবে আমাদের প্রাথমিক গবেষণার উপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারি এরকম একমাত্র আরেকটি নাটকীয় ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালে নরওয়েতে”।

২০০৯ সালে নরওয়ের চক্রটিও ছিল বেশ চমকপ্রদ। প্রায় দশ মিনিট স্থায়ী ঐ ঘটনাটি দেশের উত্তর প্রান্তে দৃশ্যমান ছিল। যদিও এই ধরনের দৃশ্য অনেককে সহজেই গোলকধাঁধায় ফেলে দিতে পারে, তবে দুর্দান্ত ঐ দৃশ্যটির অবতারনা ঘটেছিল মূলত রাশিয়ান একটি ত্রুটিযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের সময়কালে। নিউ সায়েন্টিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, রাশিয়ার সরকার নিশ্চিত করেছে, বুলাভা ক্ষেপণাস্ত্রটিই ঐ চক্রাকার দৃশ্যের উৎস। ধারণা করা হয় যে, মিসাইলটিতে একটি ত্রুটির কারণে ভুল কোণা দিয়ে ধোঁয়া নির্গমনের কারণে ঐ অপার্থিব দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। এই ত্রুটির কারণে ক্ষেপণাস্ত্রটি নিয়ন্ত্রনহীনভাবে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে ঐ বিশাল চক্রাকার প্রদর্শনীর সৃষ্টি করেছিল।

তাহলে আমাদের প্রশান্ত মহাসাগরীয় ঘূর্ণীরও কি একই রকম কোন সাদামাটা ব্যাখ্যা রয়েছে? এসিএ’র মতে, হ্যাঁ। এসিএ তাদের আপডেট করা ফেসবুক পোস্টে লিখেছে যে, “আমেরিকান জ্যোতির্বিদ জোনাথন ম্যাকডোয়েল, যিনি পৃথিবীর কক্ষপথে সকল উপগ্রহের চলাচল এবং উৎক্ষেপকের তালিকাভুক্ত করেন, নিশ্চিত করেছেন যে, এটি ছিল একটি চীনা লং মার্চ টু সি রকেটের দ্বিতীয় পর্যায়। এটি ১৮ই জুন ৬টা ২৫ মিনিটে (ইউটিসি) ৪ টি উপগ্রহ সহ জাইচাং উৎক্ষেপক কেন্দ্র হতে যাত্রা শুরু করেছিল। অ্যামৌরি বেলি ব্যাখ্যা করেছেন যে, মিশনটি শেষ করার পরের পর্যায়ে রকেটটি তার জ্বালানী (ইউডিএমএইচ এবং নাইট্রোজেন পারক্সাইড) কে নির্গত করে দেয়। ট্যাঙ্কে অবস্থিত অবশিষ্ট জ্বালানীর চাপের কারণে কক্ষপথে এটি বিস্ফোরিত হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্যেই এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়। এই ঘটনাটিই আপনারা পর্যবেক্ষণ করেছেন”।

ম্যাকডোয়েল এসিএকে ব্যাখ্যা করেন যে, এ বছরের মে মাসে দ্বিতীয়বারের মত যে চক্রটি দেখা গেছে, তার উৎসটিও একই। এই বিষয়ে অন্য একজন বিশেষজ্ঞ জোসেফ রেমিস বলেন, আকাশে দৃশ্যমান উভয় ঘূর্ণিদ্বয় একই জায়গা থেকে রকেট উৎক্ষেপনের ৩০ মিনিটের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কক্ষপথের ৩৪ ডিগ্রী বাঁকে দেখা গেছে।

জুলাই মাসে অনুরূপ আরেকটি উৎক্ষেপণের আশা করা যাচ্ছে। আপনি যদি প্রশান্ত মহাসাগরের আশেপাশে থাকেন, তবে চোখ খোলা রাখুন!

Facebook Comments

Related Articles

Back to top button