মহাকাশ বিষয়ক কিছু চমৎকার তথ্য!

মহাকাশ অসাধারণ। মহাকাশের বিশালত্বের কাছে মানব অস্তিত্ব ঠুনকো। কিন্তু এই ঠুনকো মানুষের মস্তিষ্ক মহাকাশের সীমাহীন ব্যাপ্তিকে ধারণ করার, বুঝতে পারার এক মহাকাল ব্যাপী প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। প্রতিদিন আমরা নতুন নতুন বহির্জাগতিক বস্তুর সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি। প্রকৃতি যেন বার বার আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে, আমরা যা জানি, তা মহাকাশের বিপুলতার কাছে কিছুই না।
এই পোস্টে আমি আপনাদের জানাতে চাই, মহাকাশের বিস্ময়কর কিছু তথ্য। আশা করি লেখাটি মহাকাশ সম্পর্কে আপনাদের উৎসাহী করে তুলবে।
মহাকাশ পুরোপুরিভাবে নীরব
মহাকাশে প্রতিনিয়ত কোন না কোন বিস্ফোরণ ঘটেই যাচ্ছে। কোথাও আস্ত তারা সেকেন্ডেরও কম সময়ে বিস্ফোরিত হয়ে মহাকাশের বিশালত্বে মিলিয়ে যাচ্ছে, কোথাওবা ক্ষুদ্র কৃষ্ণগহ্বর গিলে ফেলছে বিপুলাকার গ্রহ নক্ষত্রকে। চাঁদে আছড়ে পড়ছে কোন গ্রহানু কিংবা বৃহস্পতি টেনে নিচ্ছে কোন ধুমকেতুকে।
এতকিছুর পরও কেন যেন পৃথিবীতে এর কোন আওয়াজ আসে না। কেন আসে না? কারণ হল মহাকাশ পুরোপুরিভাবে নীরব। নীরব মানে মহাকাশে কোন শব্দ নেই। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও, বিকট শব্দের কিয়দংশও মহাকাশের কোথাও ছড়াবে না। এর কারণ হল শব্দ তরঙ্গ। নবম দশম শ্রেণীর পদার্থ বিজ্ঞান বইতে আমরা পড়েছি, শব্দ তরঙ্গ এমন একটা তরঙ্গ, যে তরঙ্গ উৎস থেকে চারপাশের ছড়িয়ে পড়তে বায়ু বা পানির মত কোন মাধ্যমের প্রয়োজন হয়।

মহাকাশে বায়ু বা পানির মত কোন মাধ্যম নেই। তাই শব্দ তরঙ্গ মহাকাশে ছড়াতে পারে না। তাই নিজেদের সৌরজগৎ ধ্বংস হয়ে গেলেও মহাকাশ থাকবে সম্পূর্ণ নীরব। যেন এগুলো তার কাছে কিছুই না।
আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে উষ্ণ গ্রহের গড় তাপমাত্রা ৪৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস
পৃথিবীর গড় তাপমাত্র ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৫৭ ডিগ্রি, ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় অনেকেই মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায়। একবার ভাবুন আমাদের প্রতিবেশী এক গ্রহের গড় তাপমাত্রাই হল ৪৭০ ডিগ্রি। এমন কি সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ বুধের চেয়েও এই গ্রহের তাপমাত্র অনেক বেশি। গ্রহটির নাম ভেনাস বা শুক্র।

সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ না হওয়া সত্ত্বেও গ্রহটির এই উচ্চ তাপমাত্রার অন্যতম কারণ হল শুক্রের বায়ুমন্ডল খুবই ঘন। ঘন বায়ুমন্ডলের কারণে সূর্যের তাপ এই গ্রহের ভেতর আটকা পড়ে। তবে শুক্রের পৃষ্ঠতল থেকে ৫০ কিলোমিটার উপরের গড় তাপমাত্রা আবার পৃথিবীর কাছাকাছি।
মঙ্গলে প্রাণ থাকতে পারে
পৃথিবী ছাড়া আমাদের সৌরজগতে মঙ্গল একমাত্র গ্রহ যেখানে প্রান পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্রাণ বলতে আবার সিনেমা চলচ্চিত্রের এলিয়েন ধরণের কিছু না। ১৯৮৬ সালে নাসা মঙ্গলে ব্যাকটেরিয়ার আণুবীক্ষণিক ফসিল খুঁজে পায়। ধারণা করা হয় একটা সময় মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল। তবে এখন পর্যন্ত সেখানে কোন প্রাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বিভিন্ন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা মঙ্গলে মানুষের স্থায়ী বসবাস নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কারণ মঙ্গল এমন একটি গ্রহ যা প্রাণ ধারণের জন্য অনুকূল।
নিউট্রন তারা প্রতি সেকেন্ডে ৬০০ বার ঘুরতে পারে
নিউট্রন তারা, তারাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট তারা যাদের ব্যাসার্ধ মাত্র ১০ কিলোমিটার হয়ে থাকে কিন্তু এই তারাগুলো অতিঘন তারা।

১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের একটি নিউট্রন তারার ভর সূর্যের ভরের চেয়ে বেশি, যেখানে সূর্যের ব্যাসার্ধ ৬ লক্ষ ৯৬ হাজার কিলোমিটারের উপরে। নিউট্রন তারার এই বৈশিষ্ট্যের কারণে এই তারাগুলো নিজ অক্ষে সেকেন্ডে ৬০০ বার ঘুরতে পারে।
হিরার তৈরী গ্রহ
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, কর্কট রাশির একটি সৌরজগতে একটি গ্রহ আছে যার নাম “৫৫ ক্যানক্রি ই” (55 Cancri E), একে খালি চোখে দেখা যায়। এই গ্রহটিকে হিরার তৈরী বলার কারণ হল গ্রহটিতে হিরা আছে। বেশ ভাল পরিমানই আছে। আসলে এই গ্রহটি কার্বন দিয়ে তৈরী।

কার্বনের অনুগুলো যখন সুবিন্যস্ত হয়ে যায় তখন কার্বন হিরায় পরিনত হয়। এই গ্রহটি পৃথিবী থেকে আটগুন ভারী এবং ব্যাসার্ধ দ্বিগুণ। গ্রহটির বায়ুমন্ডল মানুষ বাসের অযোগ্য। উচ্চ তাপ ও চাপের কারণে যেখানে কার্বনের আনবিক গঠন বদলে যায়। সেখানে মানুষ বাস অসম্ভব।
অদ্ভুত মিলন
মহাকাশে একই ধরণের কোন ধাতুকে পাশাপাশি ধরলে ধাতু দুইটি স্থায়ীভাবে সংযুক্ত হয়ে যাবে। একে কোল্ড ওয়েল্ডিং বলে। কারণ মহাকাশে ধাতু টুকরোগুলোতে কোন তাপ বা অন্য কোণ পার্থক্য থাকে না। ফলে এক ধাতু আরেক ধাতুকে “আলাদা” মনে করতে পারে না। এটা ধাতুর একটি ধর্ম। এ ধরণের সংযুক্তির জন্য বায়ুশূন্য অবস্থার দরকার হয়, মহাকাশে কোন বাতাস নেই।

ভাসমান পানি
পৃথিবী থেকে ১০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে জলীয় বাষ্পের মেঘ পাওয়া গেছে। যেখানে পৃথিবীর চেয়ে ১৪০ ট্রিলিয়ন গুন বেশি পানি আছে। পৃথিবীর যদি কখনও পানির দরকার হয় তাহলে ওখান থেকে এই পানি আনা যেত, কিন্তু যেহেতু এক আলোকবর্ষ পাড়ি দিতে মানুষের ২০ হাজার বছর সময়ের প্রয়োজন হবে, তাই ওই পানি আনতে গেলে মানুষের আর বেঁচে থাকতে হবে না।

মহাকাশ মানবজাতির সর্বোচ্চ সীমা। কারণ এই মহাকাশ এতই বিশাল যে এর কূল কিনারা বের করা কোন একক প্রজন্মের পক্ষে অসম্ভব। হ্যা অসম্ভব। কারণ আমাদের সৌরজগতের আন্তনাক্ষত্রিক এলাকায় পৌঁছুতে ভয়েজার ১ আর ২ এর ২২ বিলিয়ন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। ওই জায়গায় পৌঁছুতে ভয়েজারের সময় লেগেছে দীর্ঘ ৪২ বছর সময়। আমাদের সৌরজগতের ব্যাসার্ধ (ওর্ট মেঘমালা পর্যন্ত) ১.৫০ আলোকবর্ষ। সুতরাং শুধু এই সৌরজগতের খালি একদিকে চলতেই আমাদের ২০ হাজার বছর সময় চলে যাবে (যদি আমরা ভয়েজারের গতিতে চলি)। তাই আমাদের সকলের উচিৎ মহাবিশ্বের বিশালত্বের কাছে আমাদের মনকে প্রশ্ন করা, আমাদের জীবনের সবচেয়ে খারাপ মুহূর্ত কি সত্যিই অনেক বড় কিছু?