মহাকাশ

স্পেস স্যুট ছাড়া মহাশূন্যে গেলে কী হবে

7 / 100

মহাকাশের পরিবেশ যে পৃথিবীর পরিবেশের মতো মানুষের জন্য আরামদায়ক নয় তা বলাই বাহুল্য। এই কারনেই মহাকাশচারীদের জীবনের নিরাপত্তা দেবার জন্য বিশেষ ভাবে তাপ-চাপ নিয়ন্ত্রিত পোশাক ব্যবহার করা হয়। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, এই স্পেস স্যুট ছাড়া মহাকাশে গেলে মহাকাশচারী সাথে সাথেই একটা সাবানের বুদবুদের মতো ফুটে যাবেন বা বিস্ফোরিত হবেন। আরেকটা ধারণা হলো, মহাকাশের প্রচন্ড ঠাণ্ডার মাঝে তিনি সাথে সাথে জমে বরফের টুকরায় পরিণত হবেন। এমন ভয়ঙ্কর পরিণতি হবার আশঙ্কা কি সত্যিই আছে?

সত্যি বলতে কি, স্পেস স্যুট ছাড়া মহাশূন্যে যাবার সাথে সাথেই মহাকাশচারীর বিস্ফোরিত হবার সম্ভাবনা নেই। মানুষের চামড়া চাপের তারতম্য সহ্য করার মতো যথেষ্ট শক্ত। আর জমে বরফ হবারও সম্ভাবনা নেই। কারণ মহাশূন্যে আপনার শরীর থেকে তাপ বেশ ধীরে সুস্থেই বের হবে। মহাশূন্যে বেশিক্ষণ থাকলে আপনার মৃত্যু নিশ্চিত তবে এক থেকে দুই মিনিটের মাঝে আপনাকে উদ্ধার করা হলে আপনার জীবন বেঁচে যাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ আছে। স্পেস স্যুট ছাড়া মহাশূন্যে গেলে কি ঘটে আসলে? কয়েক ধরণের শারীরিক সমস্যা হতে শুরু করবে সাথে সাথেই, তবে এগুলো আপনাকে তৎক্ষণাৎ মেরে ফেলবে না।

প্রথমেই যা হবে তা হল প্রায় চাপ-বিহীন পরিবেশে আপনার ফুসফুস এবং পরিপাকতন্ত্রের মধ্যে থাকা বাতাসের আয়তন বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এমন অবস্থায় আপনি যদি মনে করেন যে দম আটকে রেখে নিজের জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনাও বাড়াবেন, তবে সেটা হবে ভীষণ ভুল! পৃথিবীতে আমরা কয়েক মিনিট দম আটকে রাখতে পারি বটে কিন্তু মহাশূন্যে দম আটকে রাখতে গেলে সেটা আমাদের ফুসফুসের ভেতরে বাতাস আকারে বৃদ্ধি পেয়ে ফুসফুস ফেটে যাবে এবং রক্তপ্রবাহের ভেতরে বাতাস চলে যাবে, ফলে মৃত্যু হবে নিশ্চিত ও যন্ত্রণাদায়ক। আর আপনি যদি স্পেস স্যুট ছাড়া মহাশূন্যে গিয়ে পড়ে ভয়ে চিৎকার দেন তবে ফুসফুসের ভেতর থেকে এই অতিরিক্ত বাতাস বের হয়ে আপনার বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবে। তবে খুব বেশিক্ষনের জন্য নয় কারণ মহাশূন্যে আমাদের শরীরে থাকা অক্সিজেন খরচ হয়ে যায় ১৫ সেকেন্ডের মাঝেই।

মহাশূন্যের কম চাপের পরিবেশে পানি সাথে সাথেই বাষ্পে পরিণত হবে যার ফলে আপনার চোখ এবং মুখের ভেতরটা শুকিয়ে যেতে শুরু করবে। আপনার পেশীকলা থেকেও পানি বাষ্প হতে থাকবে শরীরের ভেতরেই ফলে ফুলে যেতে পারে শরীরের বিভিন্ন অংশ। কিন্তু এত বেশি ফুলবে না যাতে আপনার চামড়া ফেটে যায়। কয়েক স্থানে রক্তনালিকা ফেটে যাবার কারণে আপনার চামড়ার নিচে রক্ত জমে কালশিটে পড়ে যেতে পারে বটে। চাপ কমার কারণে আরেকটি যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির উদ্রেক হতে পারে আর সেটা হল “বেন্ড” নামের একটি উপসর্গ।

সাঁতারুদের ক্ষেত্রে এটা হতে দেখা যায়। রক্তের দ্রবীভূত নাইট্রোজেন বুদবুদ সৃষ্টি করে কম চাপের পরিবেশে। আর আপনি যদি সরাসরি সূর্যরশ্মির আওতায় থাকেন তাহলে বেশ খারাপ ভাবে পুড়ে যেতে পারে আপনার চামড়া। এমনভাবে মহাশূন্যে প্রায় দশ সেকেন্ড পর্যন্ত আপনার বেশ কষ্ট হতে পারে তবে আপনি মারা যাবেন না এবং আপনার মস্তিষ্কও ঠিকভাবেই কাজ করবে। কিন্তু এর পর অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্ক একটু একটু করে অকার্যকর হতে থাকবে। নাক এবং মুখ থেকে পানি বাষ্প হবার সময় এসব অঙ্গকে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা করে তুলবে।

তাই এ সময়ে জ্ঞান হারানো, খিঁচুনি এবং শরীর নীল হয়ে যেতে পারে এমনকি এক ধরণের অন্ধত্বও দেখা দিতে পারে। তাদের মস্তিষ্ক এবং হৃদপিণ্ড অবশ্য জীবিতই থাকবে তাই এ সময়ে তাদেরকে অক্সিজেন দেওয়া হলে তারা বেঁচে যেতে পারেন। যদিও এই অন্ধত্ব সারতে কিছু সময় লাগতে পারে। তবে নব্বই সেকেন্ডের মাঝে কিছু করা না হলে চাপের অভাবে রক্তচাপ কমে রক্ত ফুটতে শুরু করবে এবং হৃদপিণ্ড থেমে যাবে। এর পর আর তাকে বাঁচানোর সম্ভাবনা থাকবে না। মোটামুটি দেড় মিনিটের মাঝে যদি দুর্ভাগা ব্যক্তিটিকে উদ্ধার করা যায় তবে সামান্য কিছু ব্যাথা আর চামড়ার কালশিটে দাগ ছাড়া তার আর কোনও সমস্যা হবে না কিন্তু এর বেশি সময় যদি কেউ মহাশূন্যে স্পেস স্যুট ছাড়া থাকে তবে তার কপালে মৃত্যুই লেখা আছে।

Facebook Comments

Related Articles

Back to top button