চিকিৎসা

গর্ভাবস্থায় শিশুর জিনগত ত্রুটি নির্ণয় পরীক্ষা চালু হলো বাংলাদেশে

মায়ের গর্ভে শিশুর কোন অস্বাভাবিকতা বা ত্রুটি থাকলে সেটা নির্ণয় করার জন্য উন্নত প্রযুক্তির একটি সফটওয়্যার চালু করেছে বাংলাদেশ শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

চিকিৎসকরা বলছেন, মায়ের গর্ভে ভ্রূণ থাকা অবস্থায় ১১ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে এই পরীক্ষাটি করালে ভ্রূণের জিনগত কোন ত্রুটি আছে কিনা সেটার ঝুঁকি নির্ণয় করা যাবে।

এই প্রযুক্তি বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ব্যবহার করা হচ্ছে।

সুইজারল্যান্ডের রোস ডায়াগনস্টিক নামে একটা প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে।

গর্ভাবস্থায় শিশুর শারীরিক অবস্থান বোঝার জন্য আলট্রসনোগ্রাফি এবং অ্যনোমালি স্ক্যান করা হয়। সেটার সঙ্গে এই পরীক্ষার পার্থক্য কী?

অ্যানোমালি স্ক্যানের মাধ্যমে শিশুর গঠন ঠিক আছে কিনা বা তার হাত-পা ঠিক আছে কিনা, এসব দেখা যায়।

সব সময় আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে ডিএনএ বা জিনগত সমস্যা ধরা যায় না। কারণ প্রতিবন্ধী বাচ্চা যারা থাকে তাদের গঠনগত ত্রুটি নাও থাকতে পারে। তাদের থাকে মস্তিষ্কে ত্রুটি বা বুদ্ধিবৃত্তিক ত্রুটি। অর্থাৎ জেনেটিক বা ডিএনএ ঘটিত ত্রুটি। এই ডিএনএ ঘটিত ত্রুটি কিন্তু আলট্রাসনোগ্রাম করে ধরা যায় না।

কীভাবে পরীক্ষা করা হয়

চিকিৎসকরা বলছেন, মানুষের শরীরে ২৩টা ক্রোমোজম আছে জোড়ায় জোড়ায়।

সেখানে ২১ নম্বর ক্রোমোজোমটি দুটো না হয়ে অনেক সময় তিনটা হয়ে যায়।

এই কারণে শিশুদের সবচেয়ে সচরাচর যে সমস্যা টি দেখা যায় সেটা হল ডাউন সিনড্রোম।

উন্নত দেশে প্রত্যেকটা মাকে প্রথম তিন মাসের মধ্যে একটা পরীক্ষা করা হয়, দেখা হয় তার গর্ভের ভ্রূণে ত্রুটিযুক্ত আছে কিনা বা ডাউন সিনড্রোম আছে কিনা।

প্রথম তিন মাসে মায়ের রক্তে দুটো হরমোন পরীক্ষা করা হয়। আরেকটা আলট্রাসাউড করা হয় ভ্রূণের ঘাড়ের পিছন দিকে। এই তিনটা জিনিস কম্পিউটারে একটা সফটওয়্যারে দিলে, এই কম্পিউটার সফটওয়্যার একটা ঝুঁকি নির্ণয় রিপোর্ট দেয়। সেই ঝুঁকি আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য একটা ডিএনএ টেস্ট করা যায়।

শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার পর বাবা-মা সিদ্ধান্ত নিতে পারে তারা এই গর্ভাবস্থা চালিয়ে যাবেন কিনা। যদি না চান তাহলে চিকিৎসকরা তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে পারেন। আর যদি গর্ভের ভ্রূণ রাখতে চান তাহলে তাকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে যে এই শিশু গর্ভেই মারা যেতে পারে বা জন্মের পর মারা যেতে পারে। অথবা প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্ম নিতে পারে” বলেন তিনি।

ডাউন সিনড্রোম কী?

বাংলাদেশে ডাউন সিনড্রোমের জন্য আলাদা কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই বলে জানান মনোরোগবিদ মেখলা সরকার ।

সেরেব্রাল পালসি বা মস্তিষ্কে পক্ষাঘাতজনিত সমস্যা, ইন্টেলেকচুয়াল ডিজঅর্ডার বা বুদ্ধিগত সমস্যা এবং ডাউন সিনড্রোমকে একই ধারায় বিচার করা হয় বলে জানান মিজ সরকার।

ডাউন সিনড্রোমের বাহ্যিক লক্ষণগুলো হলো:

  • নতুন কিছু শেখার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের চেয়ে ধীরগতির হয়ে থাকে। কিন্তু সাধারণত দ্রুত অনুকরণ করতে সক্ষম।
  • অনেকের শারীরিক কিছু উপসর্গ দেখা যায়। চোখ, জিহ্বা, কান ও পায়ের পাতা কিছুটা অস্বাভাবিক হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে হৃদরোগ বা পাকস্থলীতে সমস্যাও দেখা যায়।
  • ডাউন সিনড্রোমের পাশাপাশি অন্যান্য মানসিক সমস্যাও (অনেক সময় সেরেব্রাল পালসি) তৈরি হতে পারে।
  • সাধারণ মানুষের আলঝেইমার্স ডিজিজ বা স্মৃতি-ভ্রম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৬৫ বছর বয়সের পর, তবে ডাউন সিনড্রোমে আক্রন্তদের ৪০ বছর বয়সের পরই এই সম্ভাবনা তৈরি হয়।

কারা ঝুঁকিতে আছে

চিকিৎসকরা বলছেন, যেসব মায়ের বয়স ৩০ বছরের বেশি, যাদের আগেই একটি ডাউন সিনড্রোমের বাচ্চা আছে তারা ঝুঁকিতে আছেন।

বিশ-বছর বয়সী মায়েরা যদি গর্ভধারণ করে তাহলে দেড় হাজার মায়ের মধ্যে একজনের ডাইন সিনড্রোমের বাচ্চা হতে পারে।

অপরদিকে ৩৫ বছর বয়সী কোন মা যদি গর্ভধারণ করেন তাহলে এমন ২৫০জন মায়ের মধ্যে একজনের ডাউনসিনড্রোমের বাচ্চা হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে প্রতিদিন প্রায় ১৫টি ডাউন সিনড্রোম শিশু জন্ম নেয় বাংলাদেশে।

কত খরচ

এতদিন এই পরীক্ষাটি করার জন্য মায়ের রক্তের নমুনা দেশের বাইরে পাঠানো হত।

সেই রির্পোট আসতে সময় লাগতো ১৫-২১দিন।

যেখানে তিন মাসের সময় সীমা পার হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকতো।

আর খরচ পড়তো ১৫-২০ হাজার টাকা।

কিন্তু এখন চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করেই পরীক্ষা বাংলাদেশ শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে করানো যাবে।

Facebook Comments

Related Articles

Back to top button