“ব্ল্যাক ফাংগাস”- কোভিডের মাঝে নতুন আতংক
কোভিড-১৯ এ পুরো বিশ্ব আজ পর্যুদস্ত। এ পর্যন্ত কোভিডের যে কয়টি ভেরিয়েন্ট পাওয়া গেছে তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক ভেরিয়েন্ট ধরা হচ্ছে ভারতে ছড়িয়ে পড়া ডেল্টা ভেরিয়েন্টকে। এরই মাঝে এই ডেল্টা ভেরিয়েন্টের সাথে আরেকটি সংক্রমণ ধরা পড়েছে। কোভিড-১৯ এর বিরল কিন্তু প্রলয়ংকারী এই সংক্রমণ কোভিডের ভয়াবহতায় নতুন একটি মাত্রা যোগ করেছে। এটি আক্রান্ত ব্যক্তির চোখ নষ্ট করে দিতে পারে এবং মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ বলা হচ্ছে ব্ল্যাক ফাংগাস এর কথা।
গত মাসের কয়েকশ থেকে এই আক্রান্তের সংখ্যা এখন প্রায় ৩১ হাজারের কোঠায়। গণমাধ্যমে ২১০০ জন ব্যক্তির মৃত্যুর কথা প্রকাশিত হলেও বিভিন্ন স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের চিত্র হয়ত ভিন্ন হবে।
Mucormycosis – নামক ছত্রাকের সংক্রমণের প্রভাবে মৃত্যু প্রায় ৫০% বলে বিভিন্ন মেডিকেল প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়। যদিও এই মৃত্যুহার নির্ভর করে দেহের কোন অংশে ছত্রাক আক্রমণ হয়েছে তার উপর। রক্ত, ফুসফুস, গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি কিংবা ত্বকেও হতে পারে সংক্রমণ।
ভারতে রোগীদের মাঝে যে সংক্রমণ দেখা যায় তা প্রথমত সংক্রমিত হয় নাক এবং সাইনাসে। পরবর্তীতে তা চোখ, মস্তিষ্ক, মুখের বিভিন্ন হাড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে৷
সংক্রমণ যখন শুরু হয় তখন তা খুব দ্রুত আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার মত ভয়াবহ পরিণতি হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই অবস্থা এতটাই সংকটাপন্ন যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে চোখ কেটে ফেলতে হয়।
Mucormycetes হল একটি সর্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ছত্রাক। এটি সাধারণত অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরই আক্রমণ করে। কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। যেমন ডায়াবেটিস।
মাটিতে বসবাসকারী এই ছত্রাক সাধারণত অম্লীয় পরিবেশ বেশি পছন্দ করে। তাই এটি রোগীর শরীরের diabetic ketoacidosis নামক একটি উপাদান তৈরি করে যা রক্তকে অম্লীয় বা এসিডিক করে তোলে। এই পরিস্থিতি শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
এই পরিস্থিতির জন্য সবচেয়ে দায়ী ভারতের লোক সমাগম। কোভিড-১৯ থেকে যারা সেরে উঠেছেন বা উঠছেন তারাই সাধারণত mucormycetes এ আক্রান্ত হচ্ছেন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, স্বাস্থ্যহানি, বিভিন্ন রোগ, বিশেষত অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এবং স্টেরয়েডের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতাই এই আক্রমণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
স্টেরয়েড সেবন কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় উপকারী। তবে তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন সংক্রমণের জন্য দায়ী৷ অনেকেই একে “tripple whammy” নামে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমরা দেখতে পাই যে শিশুদেরও এই আক্রমণের কারণে চোখ কেটে ফেলতে হচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে আমাদের সকলের সচেষ্ট থাকা আবশ্যক।