কার্যকারণ

সমুদ্রের পানির রং নীল দেখায় কেন?

ছোট বেলা থেকে আমরা জেনে এসেছি যে পানি বর্ণহীন। এর নির্দিষ্ট কোন রং নেই, যে পাত্রে থাকে সেই পাত্রের বর্ণ ধারণ করে। এমনকি এর উদাহরণ আমরা সকলেই হরহামেশা দেখে থাকি। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে গিয়ে আমরা পানির বর্ণ নিয়ে দ্বিধায় পরে যাই। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে সমুদ্রের পানির কথা।

সমুদ্রের পানি খুবই স্বচ্ছ হয় সেটা আমরা জানি। সে হিসেবে এর কোন বর্ণ বা রং থাকার কথা না। কিন্তু বাস্তবে আমরা যখন সমুদ্র দেখি তখন এর নীল বর্ণ দেখে কিছুটা খটকা লাগে। স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে যে, সমুদ্রের পানির রং নীল দেখায় কেন?
আজকে আমরা এই প্রশ্নটির উত্তর জানব।

আমরা জানি সূর্যের আলো সাত রং এর আলোর সমষ্টি। সাত রং এর আলোর সাতটি ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য থাকে। এদের মধ্যে সবচেয়ে কম তরঙ্গদৈর্ঘ্য হল নীল আলোর এবং সবচেয়ে বেশি হল লাল আলোর।

সূর্যের আলো যখন কোন বস্তুর উপর পড়ে তখন আলোর প্রতিফলনের মাধ্যমে আমরা বস্তুটি দেখতে পাই [কিভাবে?]। বস্তুটি সূর্যের আলোর সবগুলো রং শোষণ করে যে কোন একটি রং বা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো প্রতিফলন করে এবং আমাদের চোখে এসে পৌঁছালে আমরা বস্তুটিকে নির্দিষ্ট রং এর দেখতে পাই।

সমুদ্রের পানির ক্ষেত্রেও ঠিক একই ঘটনা থাকে। আমরা জানি কোন বস্তু যত স্বচ্ছ সেটি তত বেশি আলো শোষণ করে। সমুদ্রের পানি যেহেতু অনেক স্বচ্ছ হয়ে থাকে তাই এটি প্রায় সকল বর্ণেরই আলোই শোষণ করে নেয়। অন্যান্য দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষণ করলেও ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট নীল আলোকে সম্পূর্ণ শোষণ করতে পারে না, ফলে কিছু অংশ প্রতিফলিত হয়। পানির এই বিশেষ শোষণ প্রক্রিয়াকে সিলেক্টিভ এবজর্বশন বলে।

আবার, এই প্রতিফলনের হার পানির পরিমাণ বা উচ্চতার উপর নির্ভর করে। যেমন আপনি এক গ্লাস পানির দিকে তাকালে একে নীল মনে হবে না। কারণ এক গ্লাস পানি থেকে প্রতিফলিত নীল আলোর পরিমাণ এতই কম যে খালি সেটি আমাদের চোখে ধরা পড়ে না।

কিন্তু পানির পরিমাণ যদি বাড়তে থাকে সেক্ষেত্রে এই প্রতিফলিত নীল আলোর পরিমাণ বাড়তে থাকে। যে কারণে সমুদ্রের পানি রং নীল দেখায়।

তবে এখানে আরও একটি বিষয় জড়িত রয়েছে। আমরা জানি আলোর বিক্ষেপণের জন্য কিভাবে আকাশ নীল দেখায়। যে আলোর তরংগদৈর্ঘ্য কম তার বিক্ষেপণ তত বেশি, অর্থাৎ চারদিক বেশি ছড়িয়ে পড়ে। ফলে নীল আলো সমুদ্রের পানির কণায় বিক্ষেপিত হয়ে চারদিক ছড়িয়ে পড়ে বেশি। ঠিক এ কারণেও সমুদ্রের পানির মধ্যে নীল আলোর প্রাধান্য বেশি থাকে।

Facebook Comments

Related Articles

Back to top button