হাবল টেলিস্কোপের জায়গা নিল জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ নামে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী মহাশূন্য টেলিস্কোপ শনিবার গ্রিনিচ মান সময় দুপুর ১২টা বেজে ২০ মিনিটে ফ্রেঞ্চ গায়ানার কোউরু মহাকাশ কেন্দ্র থেকে যাত্রা শুরু করে।
ইউরোপিয়ান আরিয়েন রকেট দিয়ে এটিকে মাত্র আধঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে কক্ষপথে স্থাপন করা হয়।
নতুন এই টেলিস্কোপের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, একটি প্রতিফলক আয়না – যা ৬.৫ মিটার চওড়া। বিশালাকৃতির এই আয়নার পেছনে সোনার প্রলেপ লাগানো রয়েছে।
বর্তমানে হাবল নামে যে মহাশূন্য টেলিস্কোপটি কাজ করছে – তার চেয়ে এটি প্রায় তিনগুণ বড় এবং ১০০গুণ বেশি শক্তিশালী।
এটির নামকরণ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এ্যাপোলো চন্দ্রাভিযানের অন্যতম স্থপতির নামে।
মহাশূন্যে এখন হাবল নামে যে টেলিস্কোপটি রয়েছে – তার জায়গা নেবে এই জেমস ওয়েব এবং এটি দিয়ে মহাশূন্যের এমন দূরত্ব পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যাবে – যা আগে কখনও সম্ভব হয়নি।
কী দেখা যাবে এই নতুন টেলিস্কোপ দিয়ে?
বিশাল আয়না এবং চারটি অতি-সংবেদনশীল যন্ত্রের কারণে এই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশবিজ্ঞানীরা মহাশূন্যের অনেক গভীর পর্যন্ত দেখতে পাবেন।
এর ফলে তাত্ত্বিকদের মতে প্রথম যে তারাগুলোর আলোয় সাড়ে ১৩শ কোটি বছর আগেকার বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের পর নেমে আসা অন্ধকার কেটে গিয়েছিল – তার অনুসন্ধান এখন করা যাবে।
বিজ্ঞানীরা বলেন – সেই সময় ঘটা পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার ফলে প্রথমবারের মত কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফসফরাস এবং সালফারের মত ‘ভারী পরমাণু’গুলো গঠিত হয়েছিল – যা প্রাণ সৃষ্টির জন্য ছিল অত্যাবশ্যক।
জেমস ওয়েবের আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে, বহু দূরের গ্রহগুলোর পরিবেশ কেমন তা পর্যবেক্ষণ করা -যার ফলে তারা অনুমান করতে পারবেন যে সেগুলোতে আদৌ প্রাণীর বসবসের মত পরিবেশ আছে কিনা।
এ টেলিস্কোপটি যে কক্ষপথে স্থাপিত হবে তা পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে।
সেখানে মহাশূন্যের তাপমাত্রা হচ্ছে মাইনাস ২৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস অর্থাৎ শূন্যের ২৩৩ ডিগ্রি নিচে।
“সেই চরম শীতল তাপমাত্রাতে তার ইনফ্রারেড তরঙ্গদৈর্ঘ্যগুলো আর জ্বলজ্বল করবে না এবং তার ফলেই জেমস ওয়েব সেই বহুদূরের জগতের ছবি তুলতে পারবে যেখানে প্রথম গ্যালাক্সিগুলো সৃষ্টি হয়েছিল ” – বলেন মার্ক ম্যাককফরিয়ান, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির উর্ধতন উপদেষ্টা।
তিনি আরো বলেন, তখন অন্যান্য তারার চারদিকে যেসব গ্রহ ঘুরছে – সেগুলোরও ছবি তোলা সম্ভব হবে।