অবাক বিশ্ববিজ্ঞান

দৃশ্যমান আগুনের ছায়া নেই কেন?

আদিম সময়ের মানুষ মনে করতো যে আগুন হলো পৃথিবীর মৌলিক একটি উপাদান।কিন্তু বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞানের মারফতে আমরা জেনেছি আগুন মৌলিক কিছুই নয়।আগুন কোনো পদার্থ নয়। আগুন হলো ‘দহন’ (Combustion) বিক্রিয়ার দৃশ্যমান রূপ।

বইয়ের ভাষায় কোনো মৌল বা যৌগকে বায়ুর অক্সিজেনের উপস্থিতিতে পুড়িয়ে তার উপাদান মৌলের অক্সাইডে পরিনত করার প্রক্রিয়াকে ‘দহন’ বিক্রিয়া বলে ।

অক্সিজেন,জ্বালানি এবাং পর্যাপ্ত তাপের উপস্থিতিতেই ‘দহন’ বিক্রিয়া হয়ে থাকে। আবার ‘দহন’ হয় শুধুমাত্র গ্যাসের সাথে গ্যাসের বিক্রিয়ায়। আর জ্বালানি- কঠিন,তরল,বায়বীয় সবই হতে পারে।তাহলে?

আসলে দহনের ক্ষেত্রে কঠিন বা তরল জ্বালানিকে এতো তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হয় যে পদার্থটা তার পৃষ্ঠ থেকে গ্যাস নিঃসরণ করতে শুরু করে। তখন গ্যাসের অণুগুলো ভেঙে যায় আর ভাঙা অংশের একটা অংশ বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া শুরু করে।

যেমন ধরুন,কাগজে আগুন ধরে কিভাবে? কাগজের কাছে আগুন আনলে,আগুনের প্রভাবে কাগজের অনুগুলো ছোটাছুটি শুরু করে আর পরস্পর থেকে দূরে সরে গিয়ে গ্যাসে পরিণত হয়। তখন গ্যাসের অণু অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া শুরু করে আর কাগজের দহন শুরু হয়।

দহনের সময় গ্যাসের অণু ভেঙে যায়। এই অণুগুলো যখন ভাঙ্গে তখন তাপ শক্তি বিকিরণ বা শোষণ হয়। তাপশক্তি সীমিত পরিসরে এক ধরণের গতি শক্তি। রিচার্ড ফাইনম্যানের মতে,তাপ হচ্ছে ‘পরমাণুর ঝাঁকি’। তো এই ঝাকাঝাকির ফলে তৈরি হয় তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ অর্থাৎ আলো। যা আমাদের চোখে প্রতিফলিত হয় আর আমরা আগুন দেখতে পাই।
.
আলো সরল রেখায় চলে। এই চলার পথে সামনে কোনো বস্তুতে বাধা পেলে বস্তুটির আলোর বিপরীত দিকে একটি অন্ধকার আবহ তৈরি হয়, যাকে আমরা ছায়া বলি।

বস্তুর ঘনত্বের উপর নির্ভর করে আলো তার চলার পথে বাধা অনুভব করে। বলা যায়,বস্তুর ঘনত্ব যত বেশি হবে আলো তত বেশি বাধা অনুভব করবে বিপরীতে বস্তুর ঘনত্ব যত কমবে আলো তত বাধা কম অনুভব করবে।

আগুনে উপস্থিত পদার্থের অণুগুলো তাপের কারণে ছূটাছুটি শুরু করে। ফলে একটা অণু থেকে আরেকটা অণুর দুরত্ব বাড়ে। যার ফলে উপস্থিত পদার্থের ঘনত্ব কমে যায় অর্থাৎ আগুনের ঘনত্ব কমে যায়।

আগুনের ঘনত্ব এতই কমে যায় যে আলো তার সরল রেখায় চলার পথে আর কোনো বাধা অনুভব করে না। যার কারণে আমরা আগুনের কোনো ছায়া দেখতে পাই না।

Facebook Comments

Related Articles

Back to top button