চিকিৎসাপদার্থবিজ্ঞান

কেমোথেরাপিঃ অভিশাপ না আশীর্বাদ!

যিশুখ্রিষ্টের জন্মের প্রায় ৩০০০ বছর আগের কথা।
মিশরীয় নারীদের এক ধরণের ব্যাধির কোনো চিকিৎসাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
বৈদ্য কবিরাজের পালা শেষ করে সমাধান বেরোলো একটাই। যেখানে সমস্যা, সমূলে উপড়ে ফেলা হবে সেই অঙ্গ।

রোগটি ছিল স্তন ক্যান্সার। ক্যান্সার শব্দের উৎপত্তি একটি গ্রিক শব্দ থেকে যার অর্থ ক্র‍্যাব বা কাঁকড়া।

মূলত কাঁকড়ার মত দ্রুত বংশবিস্তারের কারণেই এই নামকরণ। নামটি গ্রিক হলেও, ক্যান্সার মূলত প্রথম আবিষ্কৃত হয় প্রাচীন মিশরে। তৎকালীন ক্যান্সারের সমাধান একমাত্র অঙ্গবিচ্যুতি হলেও বর্তমানে ক্যান্সার শব্দটি শুনলেই মাথায় আসে একটাই ট্রিটমেন্টের কথা! কেমোথেরাপি!

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের দেহে স্বাভাবিক কোষ বিভাজন চলতে থাকে। ক্যান্সারের বেলায় দেহের কিছু কোষ বাড়তে শুরু করে অনিয়ন্ত্রিতভাবে।

এভাবে বাড়তে বাড়তে এক সময় গড়ে উঠে টিউমার কোষ। তবে যেসব অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনে দেহে টিউমার কোষ গঠিত হয় না সেক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা ক্যন্সার কোষের অবস্থানগুলো চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হন। এবং তখনই সারা দেহে প্রয়োগ করা হয় কেমোথেরাপি।

এ থেরাপিতে দেহে প্রবেশ করানো হয় কিছু সাইটো-টক্সিক গ্রুপের কেমিক্যাল। যা দ্রুত বেগে বাড়তে থাকা যে কোনো কোষের জন্যই বিষাক্ত। ফলে দেহে যেসব স্থানে ক্যান্সার কোষের উপস্থিতি চিকিৎসক শনাক্ত করতে পারেননা, সাইটো-টক্সিক কেমিক্যাল বীরত্বের সাথে তাও ধ্বংস করে রেখে যায়।

কিন্তু এবার একটা বিষয় খেয়াল করুন।
কেমোথেরাপি কেবলমাত্র দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া কোষের প্রতিই সংবেদনশীল। ফলে এই কেমিক্যাল সুস্থ ও অসুস্থ কোষের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। ফলে দেহের যেসব স্বাভাবিক অঙ্গের কোষ অন্য কোষের তুলনায় দ্রুত বিভাজিত হয়, কেমোথেরাপির ফলে সেসব সুস্থ কোষও ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।

যেমন চুলের গ্রন্থিকোষ, পরিপাকতন্ত্রের বাইরের আবরণ ইত্যাদি। সুতরাং কেমোথেরাপির পর চুল পড়ে যাওয়ার রহস্য আশা করি বুঝতে পারছেন।

এছাড়া কেমোথেরাপির ফলে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে কিডনি ও যকৃতও। দুর্বল হয় মাংস পেশি, ক্ষতিগ্রস্ত হয় রক্তকোষ।  এমনকি শুক্রাণু ও ডিম্বাণু জমে গিয়ে নষ্ট হতে পারে প্রজনন ক্ষমতা!

তাছাড়া সব ধরনের ক্যান্সারের জন্য কেমোথেরাপি প্রযোজ্যও নয়। কিছু ক্যান্সার কোষ তো কেমোথেরাপির পরেও মিউটেশনের মাধ্যমে আবার বাড়তে শুরু করে!

তারপরও সবকিছুর উর্ধে কেমোথেরাপি কিছু মানুষের জন্য আশীর্বাদ। কেননা পুরোপুরি নিরাময় করতে না পারলেও কেমোথেরাপি এগিয়ে দিতে পারে অনেকটা সুস্থ- স্বাভাবিক জীবন।

Facebook Comments

Related Articles

Back to top button