চিকিৎসা

অমরায় পাওয়া গেল প্লাস্টিক | বিপজ্জনক ভবিষ্যতের পূর্বাভাস!

অবশেষে মানুষের গর্ভেও পাওয়া গেল প্লাস্টিকের কণা। তাও ভিন্ন ভিন্ন এলাকার একাধিক নারীর গর্ভে।

সম্প্রতি ইতালির ৬ জন গর্ভবতী নারীর উপর একটি পরীক্ষা চালানো হয়। উদ্দেশ্য ছিল ভ্রুণের ইমিউনিটি পরীক্ষা করা।

এ পরীক্ষায় ডেলিভারির পর প্রত্যেক নারীর অমরা সংগ্রহ করা হয়। ৬টি অমরার মধ্যে ৪ টি তেই মোট ১২ ধরণের মাইক্রোপ্লাস্টিক আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। প্রত্যেক প্লাস্টিক কণার কালার পিগমেন্টও ছিল আলাদা। ১২ টি কণার মধ্যে ৩টি ছিল পলিপ্রোপিলিন। যা প্যাকেটজাত খাবারের মোড়ক তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।

অন্যদিকে আরো কিছু প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে যা বিভিন্ন কসমেটিক পণ্য, যেমন বিবি ক্রিম, ফাউন্ডেশন ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। তবে প্লাস্টিকের একটা বড় অংশ এখন পর্যন্ত সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ফলে তা মাতৃগর্ভে কীভাবে এলো, তা এখনও জানা যায়নি নিশ্চিতভাবে।

অমরায় প্লাস্টিক কণার অস্তিত্ব পাওয়ার বিষয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, কণাগুলো সম্ভবত মায়েরা খাবারের সঙ্গে খেয়ে ফেলেছিলেন বা তাদের নিঃশ্বাসের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করেছে।

স্তন্যপায়ীর অমরাতে প্রধানত দুটো অংশ থাকে। একটি অংশ মায়ের সাথে এবং একটি অংশ শিশুর সাথে সংযুক্ত থাকে। এগুলোর বেশিরভাগই পাওয়া গেছে অমরার শিশু সংযুক্ত অংশে।

এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাবে নবজাতক শিশুর হাঁপানি দেখা দিতে পারে। এছাড়া শিশুর ত্রুটিপূর্ণ হৃতপিন্ড, বিকৃত যৌনাঙ্গ এবং খুব অল্প বয়সেই ক্যান্সারের কারণ হতে পারে এই প্লাস্টিকের কণা।

মাইক্রোপ্লাস্টিকের আকার হয় ১০ মাইক্রোমিটারের কম(০.০১ মিমি)। যা মানুষের চুলের প্রস্থচ্ছেদের তিন ভাগের এক ভাগ। এর অর্থ এগুলো অনায়াসে রক্ত প্রবাহের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে।  কণাগুলো শিশুর দেহেও প্রবেশ করে থাকতে পারে।  অবশ্য গবেষকরা সেটি শনাক্ত করতে পারেননি। মূলত পরিত্যক্ত প্লাস্টিকজাত বস্তুর অবক্ষয়ের ফলে সৃষ্টি হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক। যা ভাইরাসের মত অবাধে উড়ে বেড়ায় বাতাসে। ফলে মানুষের নিঃশ্বাসের সাথেও দেহে প্রবেশ করে এই ক্ষুদ্র কণাগুলো। ইতিপূর্বে সমুদ্রে ও সামুদ্রিক প্রাণীর দেহেও ব্যাপক মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ এখন পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে গেছে।  এভারেস্টের চূড়া থেকে গভীর মহাসাগর পর্যন্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে।  মানুষ এরই মধ্যে খাদ্য এবং পানীয়ের মাধ্যমে ক্ষুদ্র কণাগুলো ভক্ষণ করতে শুরু করেছে।  শ্বাস নেয়ার মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করছে প্লাস্টিক কণা।

দু-একটা প্লাস্টিকজাত পণ্য নিষিদ্ধ করা হলেও আমরা পরোক্ষভাবে অনেকাংশে প্লাস্টিকের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু যথাযথ ব্যবহার এবং রিসাইকেলের অভাবে তা আজ রাজত্ব করছে মানুষেরই শিরা-উপশিরায়।

Facebook Comments

Related Articles

Back to top button