অবাক বিশ্ব

পৃথিবী ধ্বংস হলেও থাকবে এই বাঙ্কার! কিছু বিত্তবান আমেরিকানকে বাঁচাবে সাইলো-এফ!

19 / 100

পৃথিবীতে মানবসভ্যতার শেষদিনটি ভয়ঙ্কর হবে জানাই কথা। তবে সে দিন আসতে এখনও বাকি কয়েক কোটি বছর। অবাস্তব হলেও কল্পনা করুন পৃথিবীতে রাখা সব অ্যাটম বোমা একসঙ্গে ফেটে গেল। ভয়ঙ্কর এক ভূমিকম্পে পৃথিবীর সব বাড়ি ধূলিসাৎ হয়ে গেল। প্রবল সুনামিতে পুরো পৃথিবী চলে গেল জলের তলায়। কিংবা পুরো পৃথিবীতে ফিরে এল তুষার যুগ, পুরো পৃথিবী ঢাকা পড়ে গেল কয়েক কিলোমিটার পুরু বরফের তলায়। যদি এমন ঘটনা ঘটে, তাহলে আপনার কি মনে হয় পৃথিবীর কোনও মানুষ বাঁচবেন?

আমেরিকার সুপার প্রোমোটার ল্যারি হল বলছেন, “হ্যাঁ বাঁচবেন, কিছু মানুষ বাঁচবেন। পাঁচ বছরের জন্য।” শুনতে আজব মনে হলেও ঘটনাটি কিন্তু সত্যি। গুগল করে জেনে নিতেও পারেন। শেষের সেই ভয়ঙ্কর দিনটিতেও নাকি কিছু মানুষ বেঁচে থাকবেন। তবে তাঁরা কেউ আমার আপনার মতো সাধারণ মানুষ নন। তাঁরা আমেরিকার মুষ্টিমেয় কিছু ধনকুবের। হ্যাঁ ‘ডুমস ডে’তে পৃথিবীর সুপার-রিচ আমেরিকানদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিলিয়ন ডলারের বিলাসবহুল বাঙ্কার বানানো হয়েছে পাতালে। যার পোশাকি নাম সারভাইভাল কনডো(Survival Condo)।

বহবহবূববহহহ
তৈরি হচ্ছে সুপার বাঙ্কার সাইলো-এফ।

মাটির নীচে থাকা এই ১৫ তলা সুপার শেল্টার, পৃথিবীর যে কোনও বোমা আর প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে সুপার শেল্টারের আবাসিকদের সুরক্ষিত রাখবে। পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে কোনও জীব না বাঁচলেও তাঁরা নাকি বাঁচবেন, অন্তত পাঁচ বছর। বিত্তবান হুজুগে আমেরিকানরা নাকি কিনতেও শুরু করে দিয়েছেন সুপার শেল্টার। আমেরিকার গোপন স্থানে অতিকায় অ্যাটলাস মিসাইলের খোলের ভেতর তৈরি করা হয়েছে এই অত্যাধুনিক ও পৃথিবীর সবচেয়ে দামী বাঙ্কার। যেখানে প্রাসাদের বৈভব নিয়ে থাকবেন আমেরিকার সেরা ধনীরা ও তাঁদের পরিবার।

আপাতত সত্তরটি পরিবারের জন্য তৈরি করা হয়েছে এই পাতালপুরী। প্রথম সুপার লাক্সারি বাঙ্কারটির নাম ‘সাইলো-এফ’। অস্বাভাবিক উষ্ণতা, অস্বাভাবিক শৈত্য, জলের প্রবল চাপ ও উন্মত্তগতির বাতাস নাকি দাঁতও ফোটাতে পারবে না এই সারভাইভাল কনডোটির দেওয়ালে। অ্যাটম বোমার সরাসরি আঘাতকেও নাকি হেলায় রুখে দেবে বাঙ্কারের ৯ ফুট পুরু স্টিলের দেওয়াল। এই বহুতল সারভাইভাল কনডোর বাসিন্দারা তাই যেকোনও প্রাকৃতিক ও মানুষের তৈরি করা বিপর্যয় থেকে বেঁচে যাবেন।

বহলনবসনস
সারভাইভাল কনডোর নকশা, প্রবেশ পথ, ভেতরে তৈরি হওয়া সুইমিংপুল,সিনেমা হল,কনফারেন্স রুম।

আবাসন তৈরি ও সেগুলি বিক্রির ক্ষেত্রে অনেক উদ্ভাবনী ক্ষমতা এর আগে দেখিয়েছে আমেরিকা। কিন্তু সব সীমা বুঝি ছাড়িয়ে গিয়েছে ‘সাইলো-এফ’ আবাসন। ‘সাইলো-এফ’-এর ডেভলপার ল্যারি হল, তাঁর  বিত্তবান ক্রেতাদের দিচ্ছেন, যে কোনও বিপর্যয় সামলাতে সক্ষম  বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাটগুলিতে থাকছে প্লাজমা টিভি, ক্লোজ সার্কিট টিভি, সাজানো আধুনিক মডিউলার কিচেন, ডাইনিং রুম। প্রত্যেকটা ফ্ল্যাটে আলাদা ও অত্যাধুনিক বাথরুম আছে। বাথরুম তৈরি করা হয়েছে মহাকাশযানের বাথরুমের অনুকরণে।

পৃথিবীর সেরা বিত্তশালীদের এই আশ্চর্য্যজনক কলোনির সদস্যদের জন্য ‘সাইলো-এফ’-এর ভেতরে আছে কৃত্রিম ঝরনা। ঝরনার পাশে আছে সুইমিংপুল ও একটি ঝাঁ চকচকে বার। আবাসিকদের ফিট রাখার জন্য আছে একটি দারুণ জিমনাশিয়াম। আছে ইন্ডোর শ্যুটিং রেঞ্জ, রক ক্লাইম্বিং ওয়াল, লাইব্রেরি, ক্লাসরুম, কনফারেন্স রুম, সিনেমা হল, ডিজিটাল ওয়েদার স্টেশন, হাইস্পিড লিফট,লন্ড্রি এমনকি শপিং মলও এবং মিলিটারি গ্রেড সিকিউরিটি। সাইলো-এফ নামের ‘সারভাইভাল কনডো’র ভেতরে আছে পারমাণবিক শক্তি চালিত পাওয়ার হাউস। মাটির উপরে যখন তুলকালাম বিপর্যয় চলবে, মাটির তলায় আবাসিকরা তখন নরম গদিতে নিশ্চিন্তে ঘুম দেবেন।

0999
প্রস্তুত হয়ে যাওয়া এই ইউনিটটি বিক্রি হয়েছে ৩৫ কোটি টাকায়।

সাইলো-এফের ডেভেলপাররা বলছেন প্রথম বাঙ্কারটির সব ফ্ল্যাট নাকি অনেক আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল প্রচুর। তাই ‘সাইলো-এফ’-এর পাশে আরেকটি ‘সারভাইভাল কনডো’ তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সেটিরও প্রায় সব ফ্ল্যাট বা ইউনিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। অল্প কয়েকটি বাকি আছে বিক্রি হতে। তাই ডেভলপাররা তৈরি করতে শুরু করেছেন তাঁদের তৃতীয় ‘সারভাইভাল কনডো’।

‘সাইলো-এফ’-এর ডেভলপাররা তাঁদের ওয়েবসাইটে (https://survivalcondo.com/) জানিয়েছেন, তাঁদের নতুন প্রজেক্টে, ৯২০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটগুলির দাম শুরু হচ্ছে সাড়ে ১১ কোটি টাকা থেকে। ১৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটগুলির দাম পড়ছে ২২ কোটি টাকা এবং ৩৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটগুলির দাম পড়ছে ৩৮ কোটি টাকা। আশ্চর্য্যজনক ব্যাপার হল, কোনও ভাবেই আপনি এই সুপার শেল্টারগুলির বিষয়ে বিশদে জানতে পারবেন না। ‘সারভাইভাল কনডো’গুলির প্রায় সব তথ্যই গোপন রাখা হয়েছে বিশ্বের কাছে। গোপন রাখা হয়েছে ‘সারভাইভাল কনডো’গুলির অবস্থান। গোপন রাখা হয়েছে ক্রেতাদের নাম। এতক্ষণ যা জানলেন তা কেবল মাত্র হিমশৈলের চূড়া। বাকিটা জানতে গেলে কোটি কোটি টাকা দিয়ে ডলার ‘সাইলো-এফ/থ্রি’-এর ইউনিট কিনতে হবে।

হহূবূবহহ
সারভাইভাল কনডো-এর পাহারায় আমেরিকান সেনা।

অবাস্তব কল্পনা ও হুজুগে আমেরিকানদের নিয়ে, সত্যি সত্যিই বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন ধনকুবের ডেভলপার ল্যারি হল। তবে একটা জিনিস ভাবলে মজা পাবেন। পৃথিবীর শেষের দিন সাইলো-এফ’গুলির ভেতর যে সব তাবড় তাবড় বিলিয়নেয়াররা ঢুকবেন, যদি তাঁরা আদৌ বাঁচেন, তাহলে ‘সাইলো-এফ’ থেকে বাইরে বেরোবেন কপর্দকহীন হয়ে। কারণ মাটির ওপরে থাকা তাঁদের ব্যবসা আর রাজ্যপাট তো গায়েব হয়ে যাবে।

সে কথা ভেবেই কি সাইলো-এফ’ এর ভেতরে সংরক্ষণ করা হয়েছে পৃথিবীর সব ধরনের খাদ্যশস্য ও সব্জির বীজ! নতুন সভ্যতার ঊষালগ্নে মাটির ওপরে উঠেই, পৃথিবীর একসময়ের সেরা বিত্তবানেরা নেমে পড়বেন চাষ করতে। তবে সাইলো-এফ’ এ লাঙল আর কোদাল মজুত করা হয়েছে কিনা সেটা এখনও জানা যায়নি। আর গল্পের গরু তো সেই কবে থেকে গাছে চড়ছে। এখনও না হয় চড়ল। তবে গল্পের গরুকে যে বেচা ও কেনা যায়, তা দেখিয়ে দিল আমেরিকা।

Facebook Comments

Related Articles

Back to top button