কেউ ডানহাতি আবার কেউ বামহাতি হয় কেন?
মানব ইতিহাসের জন্মলগ্ন থেকেই পৃথিবীতে ডানহাতি ও বামহাতি উভয় রকমের মানুষই ছিল। ধারণা করা হয় বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৮৫-৯০ শতাংশ মানুষ ডানহাতি। আর বাকি ১০-১৫ শতাংশ মানুষ বামহাতি, তবে এর মধ্যে কিছু মানুষ আছে যারা দু হাতেই সমান পারদর্শী।
একজন মানুষ সবসময়ই অন্য একজন মানুষের চেয়ে ভিন্ন হয়ে থাকে। বর্ণ, দৈহিক আকৃতি, গলার স্বর, চেহারা প্রভৃতি একজন মানুষকে অন্যজন থেকে আলাদা করেছে। এমনকি একদম হুবহু যমজ দের মধ্যেও থেকে যায় সূক্ষ্ম কিছু পার্থক্য। আর এরকম ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে কে ডানহাতি আর কে বামহাতি সে বৈশিষ্ট্যটিও অন্যতম। তবে কেন কিছু মানুষ ডানহাতি আর কিছু মানুষ ডানহাতি হয় তা নিয়ে মানুষের মাঝে সবসময়ই ছিল অনেক কৌতূহল। আমরা অনেকসময় বামহাতিদের বিভিন্ন কাজে বিস্ময় প্রকাশও করে থাকি। তবে বামহাতিদের প্রতি এমন কৌতূহলের ফলাফল স্বরূপ অনেক সময় অনেক কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারনার জন্ম নিয়েছে মানুষের মাঝে। এমনকি এই ভ্রান্ত ধারণা মানুষকে বামহাতি দের প্রতি বর্বরতা প্রকাশেও বাধ্য করেছে। তবে সে যাই হোক না কেন, মানুষের এমন বৈশিষ্ট্যের পেছনে রয়েছে কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। আজকের লেখাটিতে আমরা জানব কিছু মানুষের ডানহাতি এবং কিছু মানুষের বামহাতি হওয়ার পেছনের সেসব বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। সেই সাথে জানব বামহাতি মানুষদের নিয়ে আরও অনেক তথ্য ও ইতিহাস।
কেন মানুষ বামহাতি হয়?
বিজ্ঞানীরা প্রায় ১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জানার চেষ্টা করে আসছে ঠিক কোন কারণে মানুষ ডানহাতি বা বামহাতি হয়। তবে বলতে গেলে কেন ১০ শতাংশ মানুষ বামহাতি হয় তার কারণ এখন পর্যন্তও ১০০ ভাগ নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হয় নি। তবে যে যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা তা হল-
১। বামহাতি হওয়ার পেছনে জিনগত কারণ
জিন মানুষের সকল ধরনের বৈশিষ্ট্য বহন করে। মানুষের শারীরিক কিংবা মানসিক সকল প্রকার বৈশিষ্ট্যের ধারক এবং বাহক হচ্ছে জিন। অধিকাংশ বিজ্ঞানীদের ধারণা মূলত জেনেটিক কারণেই একটি শিশু ডানহাতি বা বামহাতি হতে পারে। কোন একটি একক জিন বাবা-মায়ের কাছ থেকে বাচ্চাদের মধ্যে সঞ্চালিত হয়ে থাকতে পারে যার কারণে শিশুটি কোন হাতের হবে তা নির্ধারিত হয়। যদিও বিজ্ঞানীরা সঠিক ভাবে নির্ণয় করতে সক্ষম হন নি ঠিক কোন জিনটি এই বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী।
আবার সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা বলছে যে, বামহাতি বৈশিষ্ট্য তৈরি করতে শুধু একটি জিন, আরও কিছু জিন এর সাথে যুক্ত আছে। হাতের অগ্রাধিকার ব্যাখ্যা করার জেনেটিক প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে একই জিনগত স্থানে জিনের দুটি অনুলিপি থাকে যাদের একটিকে অন্যটির অ্যালিল বলে। সাধারণত একটি লোকেশনে একটি জিনের দুইটি অনুলিপি থাকে। এই অনুলিপি-দ্বয়ের একটিকে অপরটির ‘অ্যালীল’ (allele) বলা হয়। ডান-বাম অসমতার ক্ষেত্রে একটি অ্যালীলকে বলা হয় D জিন। এই D এসেছে ‘Dextral’ শব্দ থেকে, যার অর্থ ‘Right’। অপর অ্যালীলটিকে বলা হয় C জিন। C এসেছে ‘Chance’ শব্দ থেকে।
আবার, একটি জিনের অ্যালিলদ্বয়ের একটি প্রকট ও একটি প্রচ্ছন্ন হয়। যে অ্যালিল টি প্রকট হয় তার বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়, অর্থাৎ কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি D জিন টি প্রকট হয় তবে তিনি ডানহাতি হবেন। একই ভাবে যদি C জিন টি প্রকট হয় তবে ব্যক্তিটি বামহাতি হবেন। তবে গবেষণায় দেখা গেছে C জিন প্রকট থাকা সত্ত্বেও প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ ডানহাতি হন।
জিন এর এই ঘটনাটি আরও সহজভাবে ব্যাখ্যা করতে চাইলে আরেকটি উদাহরণ আলোচনা করা যাক। ধরুন একটি বাচ্চার গায়ের রঙ কালো। আবার তার বাবা ও মায়ের গায়ের রঙ যথাক্রমে কালো ও ফর্সা। ধরা যাক, কালো রঙ এর জন্য দায়ী জিন B এবং ফর্সা এর জন্য দায়ী জিন d। এখন যেহেতু তাদের সন্তানের গায়ের রঙ কালো হয়েছে, তার মানে B জিনটি d জিনের উপর প্রকট হয়েছে। তাই ফর্সা বৈশিষ্ট্য প্রকাশ না পেয়ে কালো বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে।
ঠিক একই ভাবে সন্তান ডানহাতি হবে নাকি বামহাতি হবে এর পেছনে জিনের ভূমিকা থাকে।
২। প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব
মানুষের মস্তিষ্কের ডান অংশ শরীরের বাম অংশ নিয়ন্ত্রণ করে আর মস্তিষ্কের বাম অংশ শরীরের ডান অংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যে সকল মানুষের ভাষা প্রক্রিয়াকরণ হয় বাম মস্তিষ্কে তারা ডানহাতি হন এবং যাদের ভাষা প্রক্রিয়াকরণ ডান মস্তিষ্কে হয় তারা বামহাতি হন।
এখন প্রশ্ন হল ভাষা প্রক্রিয়াকরণ এর সাথে কে কোন হাতের হবে তা নির্ভর করে কিভাবে। হ্যাঁ, এখানে চলে আসে প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বের বিষয়টি। আদিম যুগ থেকে মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন ব্যাবহার করত। কালক্রমে উদ্ভব হয়েছে ভাষার, তারপর লেখার। কিন্তু আমরা যখন লিখতে যাই তখন প্রথমে কথাগুলো আমাদের মস্তিষ্কে প্রক্রিয়াজাত হয়, এরপর সংকেত আসে আমাদের হাতে এবং আমরা লিখতে শুরু করি। অর্থাৎ কথাগুলো যদি বাম মস্তিষ্কে প্রক্রিয়া হয়, তাহলে যেহেতু বাম মস্তিষ্ক শরীরের ডান পাশ নিয়ন্ত্রণ করে, কাজেই আমরা ডানহাতে লিখতে অভ্যস্ত হই, আবার ডান মস্তিষ্কে কথাগুলো প্রক্রিয়া হলে আমরা বামহাতে লিখতে অভ্যস্ত হই।
৩। লিঙ্গ
গবেষণায় দেখা গেছে যে, মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বামহাতি হয় বেশি। গবেষকদের মতে, ছেলেদের টেস্টস্টেরন হরমোনের বিশেষ প্রভাব থাকে এই ঘটনার পেছনে। যেহেতু মেয়েদের এই হরমোন থাকে না তাই তাদের মধ্যে বামহাতি হওয়ার হার কম।
৪। ভ্রূণের বিকাশ
কিছু গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে জেনেটিকের চেয়ে গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের পরিবেশগত প্রভাব বেশি। তাদের মতে জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের চেয়ে গর্ভের পরিবেশগত কারণগুলি সন্তান ডানহাতি বা বামহাতি হওয়ার উপর বেশি প্রভাব ফেলতে পারে।
৫। অনুকরণ
বাচ্চারা পিতামাতা এবং অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ঘনিষ্ঠজনদের অনুকরণ করে তাদের ডান বা বাম হাত ব্যাবহার করতে শেখে। যদিও এই তত্ত্বটি প্রশ্নবিদ্ধ। কেননা, এই অবস্থার বিপরীত ক্ষেত্রে তত্ত্বটি কোন ব্যাখ্যা প্রদান করে না।
৬। জেনেটিক মিউটেশন
কিছু গবেষকদের মতে, মানুষের এরূপ বৈশিষ্ট্যের পেছনে ডিসলেক্সিয়া নামক একপ্রকার রোগের প্রভাব রয়েছে। এই রোগটি মস্তিষ্কের ভাষার প্রক্রিয়াকরণ-কারী স্থানে আক্রমণ করে। এই রোগের ফলে মানুষের কোন কিছু পড়ার অক্ষমতা তৈরি হয়ে থাকে। অর্থাৎ কোন ব্যক্তির কথা বলার ভাষার সাথে বর্ণ এবং অক্ষরের সামঞ্জস্য বুঝতে না পারাটাই হচ্ছে ডিসলেক্সিয়ার লক্ষণ।
আমরা পূর্বেই দেখেছি মানুষের মস্তিষ্কের ভাষা প্রক্রিয়াকরণ অংশ কিভাবে ডানহাতি বা বামহাতি হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। যেহেতু ডিসলেক্সিয়া মস্তিষ্কের ভাষা প্রক্রিয়াকরণ অংশে আক্রমণ করে, তাই এই রোগটিও মানুষের ডান বাম দক্ষতার পেছনে দায়ী থাকতে পারে।
ডিসলেক্সিয়া রোগের জন্য পিসিএসকে-৬ (PCSK-6) নামক একটি জিনকে দায়ী করা হয়। মানুষের ডানহাতি বা বামহাতি হওয়ার ক্ষেত্রে এই বিশেষ জিনের কোন ভূমিকা আছে কিনা তা নিয়ে গবেষকরা অনেক গবেষণা করেছে। তাদের মতে, মানুষের ডান-বাম অসমতার পেছনে শুধু পিসিএসকে-৬ জিনকে এককভাবে দায়ী করা যায় না। এর সাথে আরও কিছু জিন সহযোগী হিসেবে থাকতে পারে।
গবেষকরা PCSK-6 জিন এবং ডান-বাম অসমতার মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। যেহেতু প্রত্যেকটি জিনের দুটি অ্যালীল থাকে, তাদের মিউটেশন হওয়ার দুটি সুযোগ থাকে। গবেষকরা দেখেছেন, ডিসলেক্সিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে PCSK-6 জিনটির সর্বাধিক বিকল্প দেখা যায়, অর্থাৎ তাদের মধ্যে জিনটির এক বা দুই বার মিউটেশন হয়েছে। আর এসব রোগীদের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে তারা প্রায় সবাই ডানহাতি।
গবেষণা দলটি নিশ্চিত ছিল যে PCSK-6 জিন টি সরাসরি ডান-বাম অসমতার সাথে সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু তারা এটা নিশ্চিত ছিলেন না যে কেন এটি কেবল ডিসলেক্সিক রোগীদের মধ্যে উপস্থিত থাকে। তাই দলটি তাদের গবেষণায় আরও 2,600-এরও বেশি লোককে অন্তর্ভুক্ত করে যাদের মধ্যে ডিসলেক্সিয়া নেই। আর এই গবেষণাতেই তারা বুঝতে পারেন যে PCSK-6 জিন টি একা দায়ী নয়, এর সাথে আরও কিছু জিন যুক্ত থাকে।
৭। সাইটাস ইনভার্সাস (Situs Inversus)
এবার আরও একটি ঘটনার কথা জানা যাক। সেটি হল সাইটাস ইনভার্সাস। ডান-বাম অসমতার জন্য দায়ী জেনেটিক প্রক্রিয়া যখন কোন কারণে বিঘ্নিত হয়, তখন গুরুতর কিছু শারীরিক পরিবর্তনও ঘটতে পারে। যেমন, মানব শরীরের ডান অংশের অঙ্গ বা অঙ্গাণুগুলো বাম অংশে অবস্থান নিতে পারে এবং এর বিপরীত ঘটনাও ঘটতে পারে। এই ঘটনাকে বলা হয় সাইটাস ইনভার্সাস (Situs Inversus)। এটি এমন একটি জিনগত পরিবর্তন যার ফলে অনেকের হৃৎপিণ্ড শরীরের বাঁপাশের পরিবর্তে ডানপাশে অবস্থান করতে পারে। শারীরিক অসমতার ফল হিসেবে যদি মানুষের ডান-বাম অসমতা তৈরি হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে সাইটাস ইনভার্সাস এর ভূমিকাও থাকতে পারে।। তবে এটি এখনো একটি হাইপোথিসিস মাত্র এবং এটি নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে
৮। স্পাইনাল কর্ড
আমরা এতক্ষণ ডান-বাম অসমতার জন্য মস্তিষ্কের বিভিন্ন দিক আলোচনা করলাম। তবে কিছু আধুনিক গবেষণা মতে আমাদের প্রচলিত এই চিন্তাধারা কে সম্পূর্ন অস্বীকার করে দিচ্ছে। যেমন আধুনিক গবেষকরা বলছে যে, ডানহাতি বা বামহাতি হওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের মস্তিষ্ক নয় বরং স্পাইনাল কর্ডই দায়ী।
মানুষের হাত ও পায়ের সঞ্চালন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্স অঞ্চল দ্বারা। আমরা যখন হাত বা পা নড়াতে চাই তখন মস্তিষ্কে উদ্দীপনা তৈরি হয়। এই উদ্দীপনা মোটর কর্টেক্স প্রথমে স্পাইনাল কর্ডে প্রেরণ করে। স্পাইনাল কর্ড তখন এই সিগন্যালকে পেশী সঞ্চালন রূপান্তরিত এবং ফলাফল স্বরূপ আমাদের হাত বা পা নড়ে উঠে।
গর্ভবতী মায়েদের উপর আল্ট্রাসনোগ্রাফির দ্বারা পরীক্ষা করে জানা যায় যে, বাচ্চাদের মধ্যে হাত চোষার প্রবণতা গর্ভে থাকা অবস্থায় প্রায় ১৩ সপ্তাহ পর থেকেই দেখা যায়। অর্থাৎ মানুষ যখন মায়ের গর্ভে থাকে, তখন থেকেই কিন্তু এই ডান-বাম অসমতা তৈরি হয়। এসব পরীক্ষায় দেখা যায় যে কোন বাচ্চা ডান হাত চোষে, কোন বাচ্চা চোষে বাম হাত।
কিন্তু সমস্যা হল ১৫ সপ্তাহের আগে মানুষের মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্স এবং স্পাইনাল কর্ডের মধ্যে কোন প্রকার যোগসূত্র তৈরি হয় না। তাহলে অবশ্যই ১৩ সপ্তাহের বাচ্চার মধ্যে ডান-বাম অসমতা নিশ্চয়ই মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে না।
তার মানে যেহেতু স্পাইনাল কর্ড আমাদের হাত বা পায়ের পেশী সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে, সেহেতু মস্তিষ্ক নয় স্পাইনাল কর্ডই গর্ভাবস্থায় এমন ডান-বাম অসমতার জন্য দায়ী। এর পেছনে অবশ্য রয়েছে স্পাইনাল কর্ডের জিনগত বৈশিষ্ট্য। স্পাইনাল কর্ডের জিনের কার্যক্রমের কারণেই ডান-বাম অসমতার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, তাদের গবেষণা মতে মস্তিষ্ক নয় বরং স্পাইনাল কর্ডের জিনগত বৈশিষ্ট্যই ডানহাতি কিংবা বামহাতি হওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
Ambidextrous’ বা সব্যসাচী
ডানহাতি বা বামহাতি ছাড়াও এক ধরনের মানুষ আছে যার উভয় হাতেই সমান দক্ষ হয়।
ডান-বাম অসমতা হীন এরকম গুণসম্পন্ন মানুষদের বলা হয় ‘Ambidextrous’ বা সব্যসাচী। এটি খুবই বিরল ঘটনা, কারণ মাত্র ১ শতাংশেরও কম মানুষের ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। তবে অনেক গবেষকের মতে সব্যসাচী হওয়াটা অভ্যাসের মাধ্যমেও সম্ভব। কেউ যদি তার দুই হাতে সমান পারদর্শী হতে চায় এবং ক্রমাগত অভ্যাস করতে পারে তাহলে একসময় সে এই দক্ষতা অর্জনে সক্ষম হবে। যেহেতু সব্যসাচী ব্যক্তিদের সংখ্যা খুবই কম আমাদের আশেপাশে, তাই সচারচর আমরা এদের দেখি না। তবে আপনি যদি এমন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়ে থাকে, তাহলে আপনি হলে পৃথিবীর ওই ১ শতাংশ মানুষের মধ্যে ১ জন।
বামহাতি ব্যক্তিদের যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়
যেহেতু ডান হাতে কাজ করতে অভ্যস্ত মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি, তাই প্রায় সবক্ষেত্রেই ডানহাতিদের সুবিধা হয় এমনভাবে সব কিছু নির্ধারণ করা হয়। ফলে সে সব ক্ষেত্রে বামহাতিদের বিভিন্ন সমস্যা ও বাধার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন-
১। কাঁচি সহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আছে যেগুলো ডানহাত দিয়ে ব্যাবহার করার মত করে ডিজাইন করা হয়। আর এসব যন্ত্রপাতি ব্যাবহারে বামহাতি দের যথেষ্টই বেগ পেতে হয়।
২। বাংলা ভাষা সহ অধিকাংশ ভাষার হাতের লেখাই বাম থেকে ডানে চলে। বিশেষ করে ল্যাটিন বা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাসা বংশের ভাষাগুলো উল্ল্যাখযোগ্য। এসব ভাষায় যখন একজন বামহাতি যখন লিখতে নেন তখন তার হাতকে অনেকটাই কসরত করতে হয়।
৩। বামহাতি বাচ্চারা যখন লেখা শেখা শুরু করে তখন অনেকক্ষেত্রেই তারা উলটোদিক দিক থেকে লেখা শুরু করে। শিশুদের এই সমস্যাটিকে ‘mirror writing’ বলা হয়। অবশ্য এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা এবং ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়।
৪। কিছু গবেষণা মতে মৃগী এবং অটিজমের মত রোগ বাম হাতিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে এটি শুধুই একটি পরিসংখ্যান মাত্র যার এখনো কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায় নি।
৫। বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে লক্ষ করে দেখবেন চেয়ার গুলো ডানহাতিদের লেখার মত করে বানানো হয়। বুঝতেই পারছেন এসব সিটে বসে একজন বামহাতির লেখা কতটুকু কষ্টসাধ্য হবে।
৬। গিটার, ভায়োলিন সহ বিভিন্ন-বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখতে গেলে বামহাতিদের বেশ কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়। যেহেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষক ডানহাতি হয়ে থাকেন, ফলে প্রথমে শিক্ষক কি বলেন সেটা শোনা, বোঝা, দেখা এবং তারপর সেটাকে ডানহাতি থেকে বামহাতির মতো উল্টে সাজিয়ে নেওয়া সহ সবকিছুই করতে হয় বেশ দ্রুত, যা কি না নিঃসন্দেহে নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য যথেষ্ট কষ্টকর।
আরও এরকম অনেক সমস্যারই সম্মুখীন হতে হয় বামহাতি দের। অবশ্য কারণটা আমাদের জানাই। যেহেতু আদিকাল থেকেই ডানহাতিদের আধিপত্য, সব কিছু তাই তাদের সুবিধার্থেই করা হয়েছে।