বিজ্ঞান

ঘূর্ণিঝড় কী? ঘূর্ণিঝড় কেন হয়? ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কীভাবে হয়?

66 / 100

ঘূর্ণিঝড়ঃ

কোনো স্থানে বায়ুর তাপ বৃদ্ধি পেলে সেখানকার বায়ু উপরে উঠে যায়। ফলে বায়ুর চাপ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। একে নিম্নচাপ বলে। এ নিম্নচাপ অঞ্চলে প্রায় বায়ুশূন্য অবস্থা থাকে বলে আশপাশের অঞ্চল থেকে বায়ু প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে। এ নিম্নচাপ কেন্দ্রমুখী প্রবল ঘূর্ণি বায়ু প্রবাহকে ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন বলে।

1589826822682
ঘূর্ণিঝড়

ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টিঃ

বিষুবীয় অঞ্চলে আর্দ্র এবং উষ্ণ হাওয়া মহাসাগরের পৃষ্ঠ থেকে স্বাভাবিকভাবেই উপরের দিকে উঠতে থাকে। এভাবে উষ্ণ হাওয়া উপরের দিকে ওঠার ফলে এটি মহাসাগরীয় পৃষ্ঠে একটি কম বায়ুচাপের একটি এলাকা সৃষ্টি করে। তখন চারপাশ থেকে তুলনামূলক উচ্চ বায়ুচাপ বিশিষ্ট বাতাস সেই কম বায়ুচাপের এলাকায় প্রবেশ করে এবং সেটিও আর্দ্র এবং উষ্ণ হতে থাকে।

1589826398574
বায়ুপ্রবাহের দিক

আগের মত এরাও উষ্ণতার জন্য উপরে উঠতে থাকে। এভাবে একটি চক্রের সৃষ্টি হয়। এই উষ্ণ বাতাস উপরে উঠে ঠান্ডা হওয়ার ফলে বাতাসে পানির অণুগুলো জমাট বেঁধে মেঘের তৈরী করে। ক্রমাগত এই উষ্ণ এবং আর্দ্র বাতাসের উপরে ওঠার কারণে একটি পাকের সৃষ্টি হয়। এই পাক তখন বাতাস এবং মেঘ নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে আরও শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে।

1589827283407
পুঞ্জীভূত মেঘ

এ ক্ষেত্রে এর জ্বালানী হিসেবে কাজ করে মহাসাগরের উষ্ণ এবং আর্দ্র বাতাস। (আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে মহাসাগরের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা। কারণ তাপমাত্রার ফলেই বাতাস উষ্ণ হয়ে উপরের দিকে উঠে যায়।) ঠিক এই কারণেই এদেরকে বিষুব অঞ্চলে হতে দেখা যায়।

পাকের ঘূর্ণনগতি বাড়ার সাথে সাথে ঝড়টির কেন্দ্রে একটি ‘চোখ’ উৎপন্ন হয়।

1589826407482
ঘূর্ণিঝড়ের চোখ

যেহেতু এরকম ঝড়ের জ্বালানী আসে সাগরপৃষ্ঠের তাপমাত্রা থেকে, এজন্য এরা ভূমিতে গিয়ে ‘জ্বালানী’র অভাবে খুব একটা সুবিধা করতে পারে না। তবে মহাসাগরে থাকা অবস্থায় এর ব্যাপ্তি এবং গতির উপর নির্ভর করে এটি অনেকসময় ভূমিতে বেশ ভালোরকমের তান্ডব সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়।

এই ঝড়ের বাতাসের বেগ ঘন্টাপ্রতি ৩৯ মাইল এ পৌঁছলে একে ট্রপিকাল ঝড় বলা হয় এবং যখন ঘন্টাপ্রতি বাতাসের বেগ প্রায় ৭৪ মাইল হয়, তখন এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রপিকাল সাইক্লোন বলা হয়। এদের গতির উপরে ভিত্তি করে এদের বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করা হয়।

ঘূর্ণিঝড়ের শ্রেণী বিভাজনঃ

বাতাসের তীব্রতা ও গতির ভিত্তিতে ঘূর্ণিঝড়ের শ্রেণী বিভাজন করা হয়। যেমন-

১. নিম্নচাপ-বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ২০ থেকে ৫০ কিলোমিটার।

২. গভীর নিম্নচাপ- বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ দশমিক ৮৪ থেকে ৬১ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার।

৩. ঘূর্ণিঝড়- বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ দশমিক ৫৬ থেকে ৮৭ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার।

৪. প্রবল ঘূর্ণিঝড়- বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ দশমিক ১ থেকে ১১৮ দশমিক ২৬ কিলোমিটার।

৫. হারিকেনের তীব্রতা সম্পন্ন প্রবল ঘূর্ণিঝড়- বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ১১৯ দশমিক ৮৮ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে।

জলোচ্ছ্বাস: ঘূর্ণিঝড়ের একটি অনুষঙ্গ

 ঘূর্ণিঝড়ের প্রবল ঝড়ো বাতাস সমুদ্রপৃষ্ঠে আকস্মিক উন্মাতাল তরঙ্গ এবং জলস্ফীতির সৃষ্টি করে যা জলোচ্ছ্বাস হিসেবে পরিচিত। জলোচ্ছ্বাস ঘূর্ণিঝড়ের একটি স্বাভাবিক অনুষঙ্গ। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র যখন সমুদ্রতীর অতিক্রম করে, প্রায় কাছাকাছি সময়েই জলোচ্ছ্বাস তীরবর্তী অঞ্চলে আঘাত হানে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে এ যাবৎ সংঘটিত জলোচ্ছ্বাসের সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৩ মিটার। ঘূর্ণিঝড়কালীন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন ঘটে এ জলোচ্ছ্বাসের দ্বারা, যা অনেক সময়  উপকূলীয় দ্বীপ এবং সমুদ্র তীরবর্তী এলাকাসমূহকে বিরানভূমিতে পরিণত করে। বাংলা ভাষায় জলোচ্ছ্বাস, বান, জোয়ারঘটিত জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়ঘটিত জলোচ্ছ্বাস, ঝড়ো জলোচ্ছ্বাস প্রায় সমার্থক হিসেবে ব্যবহূত হয়ে থাকে।

একটি ঘূর্ণিঝড়ের সর্বাপেক্ষা ধ্বংসাত্মক উপাদান হলো এর সঙ্গে সংঘটিত জলোচ্ছ্বাস। পাঁচ/ছয় মিটার উচ্চতার সবেগে ধেয়ে আসা প্রাচীরাকৃতির জলরাশি দ্বারা সৃষ্ট বিরাট বিপর্যয় প্রতিরোধে কার্যকরী কিছু করার থাকে না। বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় সংঘটনের সময়কাল হলো এপ্রিল থেকে মে এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস। প্রতি বৎসর গড়ে পাঁচটি পর্যন্ত মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হানে এবং এর সঙ্গে সংঘটিত জলোচ্ছ্বাস কখনও কখনও দেশের ২০০ কিমি অভ্যন্তর পর্যন্ত পৌঁছে থাকে। বাতাসের গতিবেগ বৃদ্ধি পেলে জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতাও বৃদ্ধি পায়। ঘূর্ণিঝড়জনিত জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে চন্দ্র সূর্যের একত্রিত আকর্ষণ যোগ হলে জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা আরও বেড়ে যায় এবং মারাত্মক বন্যার সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে সৃষ্ট ঝড়ো জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতার বিস্তার সাধারণত ৩ থেকে ৬ মিটার। ১৯৭০ এর ঘূর্ণিঝড়ের (১২-১৩ নভেম্বর) সঙ্গে ৬-১০ মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস ছিল; বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২২ কিমি। সমুদ্রে জোয়ারকালীন সময়ের এ ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে এ পযন্ত সংঘটিত সর্বাপেক্ষা মর্মন্তুদ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। পাঁচ লক্ষ মানুষের জীবনাবসান ঘটে এ ঘূর্ণিঝড়ে। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৫ কিমি। এ ঝড় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, বরগুনা এবং খুলনা এলাকায় আঘাত হানে; ঝড়ের সঙ্গে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ৬.১-৭.৬ মিটার এবং এতে প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়।

বাংলাদেশের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘূর্ণিঝড়ের খতিয়ান

২৮, ২৯ মে ১৯৬৩:

মানুষের প্রাণহানি ১১ হাজার ৫২০। বসতবাড়ি বিনষ্ট ১০ লাখ। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ৮-১০ ফুট উচ্চতায়।

১৫ ডিসেম্বর, ১৯৬৫ :

মানুষের প্রাণহানি ৮৭৩। লবণক্ষেত্র নিমজ্জিত হয় ১০ হাজার একর। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ২০৪ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ২ দশমিক ৪ থেকে ৩ দশমিক ৭ মিটার উচ্চতায়।

1589828339928
বাংলাদেশে বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ

১২ নভেম্বর, ১৯৭০:

বলা হয়ে থাকে এই ঝড়ে মানুষের প্রাণহানী হয়েছিল ৫ লাখ। যদিও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর বলছে ৩ লাখ। গবাদিপশু ও বসতবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা যায়নি। বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘন্টায় ২২০ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ১০-৩৩ ফুট উচ্চতায়।

২৮ নভেম্বর, ১৯৭৪:

মানুষের প্রাণহানি ২৮জন। নিখোঁজ ২৮০। গবাদিপশুর মৃত্যু এক হাজার। বসতবাড়ি বিনষ্ট ১৫ হাজার। বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিলো ১০-১২ ফুট উচ্চতায়। এটি হয়েছিল সন্দীপে।

২৫ মে ১৯৮৫:

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ১৯০৬ বর্গমাইল। মানুষের প্রাণহানি ১১ হাজার ৬৯জন। নিখোঁজ ৬৮০৫। ক্ষতিগ্রস্থ লোকের সংখ্যা এক কোটি ৩১ লাখ ৯৩৫। গবাদি পশুর মৃত্যু এক লাখ ৩৫ হাজার ৫৫। বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় ১৫৪ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ১৫ ফুট উচ্চতায়।

২৯ নভেম্বর, ১৯৮৮:

মানুষের প্রাণহানী ৫ হাজার ৭০৮। নিখোঁজ ৬ হাজার। হরিণ নিহত হয় ১৫ হাজার এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগার ৯টি। গবাদি পশুর মৃত্যু হয় ৬৫ হাজার। বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘন্টায় ১৬৫ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ২-১৪ দশমিক ৫ ফুট উচ্চতায়।

২৯ এপ্রিল, ১৯৯১:

মানুষের প্রাণহানি এক লাখ ৩৮ হাজার ৮৮২ জন। ক্ষতিগ্রস্থ লোক প্রায় এক কোটি। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ১২-২০ ফুট উচ্চতায়। এ ঘূর্ণিঝড়টি বয়ে যায় সন্দীপ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ভোলা, কুতুবদিয়া ও টেকনাফের ওপর দিয়ে।

২৯ এপ্রিল, ১৯৯৪:

মানুষের প্রাণহানি ১৮৮। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ২২০ কিলোমিটার।

১৯ মে, ১৯৯৭:

এ ঘটনায় মৃত ১৫৫ জন। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৩২ কিলোমিটার।

সিডর, ১৫ নভেম্বর, ২০০৭:

বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৩ কিলোমিটার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী সিডরে প্রাণ হারিয়েছে তিন হাজার ৩৬৩ জন। যদিও ঘটনার পর রেডক্রিসেন্ট ও বিভিন্ন বেসরকারি হিসেবে বলা হয়েছিল প্রায় ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। সরকারি হিসেবে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে বরগুনা জেলায় এক হাজার ২৫৭ জন। এরপর বাগেরহাটে ৮১০জন। পটুয়াখালীতে ৪৫৭ জন। আর খুঁজে পাওয়া যায়নি ৮৭১ জনকে।

আইলা, ২৫ মে, ২০০৯:

নিহত ১৯০ জন। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯২ কিলোমিটার। এটি দিনে আঘাত হানে বলে প্রাণহানি কম হয়। তবে ব্যাপক জলোচ্ছ্বাস হয় এবং সমুদ্র থেকে প্রচুর লবণ পানি ঢুকে পড়ায় এখনও খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের অনেক এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট বিরাজ করছে। বহু মানুষ এখনো বাঁধে আশ্রয় নিয়ে আছেন।

এছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সাইক্লোনের তালিকায় প্রথম ১০টির মধ্যে পাঁচটিতেই আছে বাংলাদেশের নাম। এগুলো হচ্ছে-

১. গ্রেট ভোলা সাইক্লোন, বাংলাদেশ (১৯৭০, উৎপত্তিস্থল বঙ্গোপসাগর, মৃতের সংখ্যা ৫ লক্ষ)।

২. হুগলি রিভার সাইক্লোন, ভারত (১৭৩৭, উৎপত্তিস্থল বঙ্গোপসাগর, মৃতের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৫০ হাজার)।

৩. হাইফং টাইফুন, ভিয়েতনাম (১৮৮১, উৎপত্তিস্থল পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর, মৃতের সংখ্যা ৩ লক্ষ)।

৪. বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন, বাংলাদেশ (১৫৮৪, উৎপত্তিস্থল বঙ্গোপসাগর, মৃতের সংখ্যা ২ লক্ষ)।

৫. গ্রেট বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন, বাংলাদেশ (১৮৭৬, উৎপত্তিস্থল বঙ্গোপসাগর, মৃতের সংখ্যা ২ লক্ষ)।

৬. বাংলাদেশ (১৮৯৭, বঙ্গোপসাগর, মৃতের সংখ্যা ১ লক্ষ ৭৫ হাজার)।

৭. সুপার টাইফুন নিনা, চীন (১৯৭৫, উৎপত্তিস্থল পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর, মৃতের সংখ্যা ১ লক্ষ ৭১ হাজার)।

৮. সাইক্লোন জিরো-টু-বি, বাংলাদেশ (১৯৯১, উৎপত্তিস্থল বঙ্গোপসাগর, মৃতের সংখ্যা ১ লক্ষ ৪০ হাজার)।

৯. গ্রেট বম্বে সাইক্লোন, ভারত (১৮৮২, উৎপত্তিস্থল আরব সাগর, মৃতের সংখ্যা ১ লক্ষ)।

১০. হাকাতা বে টাইফুন, জাপান (১২৮১, উৎপত্তিস্থল পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর, মৃতের সংখ্যা ৬৫ হাজার)

ঘূর্ণিঝড়ের নাম কিভাবে দেয়া হয়ঃ

আদতে একসময় ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়া হত না। গত কয়েক শতাব্দী ধরে আটলান্টিক ঝড়ের নাম দেয়া হয়ে আসছে যেটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত বলবৎ থাকে। এরপরে আবহাওয়াবিদরা মিলে মেয়েদের নামে ঝড়গুলোর নামকরণের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৫৩ সালে US Weather Service আনুষ্ঠানিকভাবে Q, U, X, Y, Z ব্যতীত A থেকে W পর্যন্ত আদ্যক্ষরে মেয়েদের নামে ঝড়ের নামকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এ নিয়ে ৬০ এবং ৭০ এর দশকে নারীদের প্রতিবাদের মুখে অবশেষে ১৯৭৮ সালে ছেলেদের নামেও ঝড়ের নামকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এসব ঝড়ের নামকরণের একটি সুন্দর ব্যাবস্থা ছিলো। বছরের প্রথম ঝড়ের নাম রাখা হত A আদ্যক্ষর দিয়ে, দ্বিতীয় ঝড়ের নাম রাখা হত B আদ্যক্ষর দিয়ে, এভাবে চলতে থাকতো। আবার জোড় সালের বিজোড় ঝড়গুলোর (মনে করি ২০১৪ সালের ৩য় ঝড়) নাম রাখা হত ছেলেদের নামে আর বিজোড় সালের বিজোড় ঝড়গুলোর নাম রাখা হত মেয়েদের নামে!

সাইক্লোনের ঝড়ের নামকরণের ক্ষেত্রে World Meteorological Organization এর পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু অঞ্চল ভাগ করে দেয়া হয়েছে। সেই অঞ্চলের দেশগুলো মিটিং এর মাধ্যমে ঝড়গুলোর নাম ঠিক করে থাকে। বাংলাদেশ পড়েছে ভারতীয় মহাসাগর অঞ্চলে। আমাদের অঞ্চলে আমাদের দেশের সাথে আরও আছে, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং ওমান। এসব দেশগুলো ইতোমধ্যে বেশ কিছু নাম দিয়ে রেখেছে।

1589828186951
ঘূর্ণিঝড় আমফানের মধ্য দিয়ে এই তালিকা শেষ হবে

যখন ঝড় হয়, তখন পর্যায়ক্রমিকভাবে এদের সেই নামটি দেয়া হয়ে থাকে। কবে ঝড় হবে, সেটি আমরা না বলতে পারলেও আগামী ঝড়ের কী নাম হবে, সেটি কিন্ত আমরা জানি!

Facebook Comments

Related Articles

Back to top button