হাকালুকিতে জলস্তম্ভ, কী বলছেন আবহাওয়াবিদগণ
ভরা বর্ষায় টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বয়ে গেছে তাপপ্রবাহ। তেমন বৃষ্টিও নেই। এমন গরমের সময়ে হাওর থেকে জলরাশি ঘূর্ণায়মান বায়ুর টানে হাতির শুঁড়ের মত এগিয়ে যাচ্ছে মেঘের দিকে- এমন দৃশ্য রোমাঞ্চিত করছে সবাইকে।
ওই জলস্তম্ভ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন আবহাওয়াবিদরাও। তারা বলছেন, শনিবার বিকালে হাকালুকি হাওরে মানুষ যা দেখেছে, তা আসলে একটি টর্নেডো।
স্থলভাগের টর্নেডো যখন জলরাশিকে স্পর্শ করে, তখন প্রবল ঘূর্ণিবায়ুর টানে ফানেলাকৃতি নিয়ে পানি উঠে যায় মেঘের দিকে, যা অনেকটা হাতির শুঁড়ের মত দেখায়। ইংরেজিতে একে বলে ‘ওয়াটার স্পাউট’। হাকালুকিতেও স্বল্প সময়ের জন্য এমন একটি ওয়াটার স্পাউটের দেখা মিলেছে।
হাকালুকির ওই টর্নেডো জলের ওপর থাকায় উদ্বেগের চেয়ে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে বেশি, কারণ বাংলাদেশে কোনো ‘ওয়াটার স্পাউট’ ছবি বা ভিডিওতে ধরা পড়ল এই প্রথম।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, নির্জন হাওরে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটে থাকলেও তার রেকর্ড নেই। এখন পর্যটকের আনাগোনা বাড়ায় এবং হাতে হাতে মোবাইল ফোন থাকায় বিষয়টি সামনে আসছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, “শনিবার হাকালুকি হাওরে যেটা হয়েছে, সেটা টর্নেডো।… অনেক সময় স্থানীয়ভাবে বাতাসের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে তা উপরের দিকে উঠে যায়; আশপাশের ঠাণ্ডা বাতাস তখন দ্রুত বেগে ওই খালি স্থানের দিকে ছুটতে থাকে। তখন টর্নেডোর সৃষ্টি হয়। আর সেই টর্নেডো জলের স্পর্শে এলে তৈরি হয় ফানেল ক্লাউড।”
এরকম ওয়াটার স্পাউট তৈরি হলে পানিসহ আশপাশে যা থাকে, সব ঊর্ধ্বমুখী হয়। সেই হাতির শুঁড় হয়ত বেশ খানিকটা পথ পানির ওপর দিয়ে এগিয়েও যায় টর্নেডোর টানে। কিছু সময় পরে হয়ত জলস্তম্ভ ভেঙে পড়ে।
ওই ঘূর্ণিচক্রের মধ্যে বাতাস গরম থাকে বলে আশপাশের বৃষ্টির পানিও তুলনামুলক গরম থাকতে পারে। ওয়াটার স্পাউটের সঙ্গে উপরে উঠে যাওয়া মাছ বা অন্য যে কোনো বস্তু তখন নিচে পড়তে পারে।
বায়ুমণ্ডলে বাতাসের তাপমাত্রা ভূমির উপরিভাগের তুলনায় কম থাকে। গরম আবহাওয়ায় ভূপৃষ্ঠের কাছের বাতাস দ্রুত উপরে উঠে গেলে আর্দ্র বায়ুর সংস্পর্শ পায়। তখন গরম বাতাস দ্রুত ঠাণ্ডা হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে সৃষ্টি হয় বজ্রমেঘ বা কিউমুলোনিম্বাস। কিউমুলোনিম্বাস হচ্ছে খাড়াভাবে সৃষ্টি হওয়া বিশাল আকৃতির পরিচালন মেঘ; যা থেকে শুধু বিদ্যুৎ চমকানো নয়, বজ্রপাত, ভারি বর্ষণ, শিলাবৃষ্টি, দমকা-ঝড়ো হাওয়া, এমনকি টর্নেডোও সৃষ্টি হতে পারে। সেই টর্নেডো যখন ফানেল আকারে ঘূর্ণায়মান মেঘের কুণ্ডলী নিয়ে ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে এগিয়ে যায়, তখন ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার বা আরো বেশি বেগের ঝড় বয়ে যেতে পারে।
হাকালুকির ‘ওয়াটার স্পাউট’ নিয়ে ড. মোহন কুমার দাশ বলেন, “বর্ষার সময়ে আমাদের এখানে টর্নেডো, ওয়াটার স্পাউট, এসব খুব একটা ঘটে না। এবার অনুকূল পরিবেশের কারণে এটা ঘটেছে।”
তিনি বলেন, “এ ধরনের টর্নেডোর সময় কিউমুলোনিম্বাস ক্লাউড হয়। ক্লাউডের একটি অংশ সারফেস টাচ্ করে। ল্যান্ডের কাছে থাকলে ল্যান্ড, পানিতে টাচ করলে আরও শক্তিশালী হয়। সারফেস থেকে পানি নিয়ে আরও স্ট্রং হয়। পানিতে হলে ওয়াটার স্পাউট বলে। হাকালুকিতে ঘটার কথা প্রথম জানলাম আমরা, পর্যবেক্ষণটা গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে হয়ে থাকলেও ছবি তুলতে পারেনি কেউ।”