ওজোনস্তরে বিশাল ফাটল! হুমকির মুখে বিশ্বসভ্যতা
বায়ুমণ্ডলের যে পৃথিবীর ওপর ভয়ংকর ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি (আলট্রাভায়োলেট রে) আটকে দেয় সেই ওজোনের চাদরে অ্যান্টার্কটিকার চেয়েও আকারের বিরাট ফাটল তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ওজোনস্তরের ওপর নজর রাখা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কোপারনিকাস অ্যাটমস্ফিয়ার মনিটরিং সার্ভিস বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এমন সংবাদ জানিয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, এই মৌসুমে বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তরে এত বড় মাপের ফাটল খুবই অপ্রত্যাশিত। মানবসভ্যতার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনকও। ওজোনস্তরে এত বড় মাপের ফাটল আজ থেকে ৪২ বছর আগে ১৯৭৯ সালে শেষ দেখা গিয়েছিল।
কোপারনিকাস অ্যাটমস্ফিয়ার মনিটরিং সার্ভিসের তরফে এও জানানো হয়েছে, ওজোন স্তরের ওই ফাটল খুব দ্রুত বড় হচ্ছে। আরও ভয়াবহ তথ্য হলো তা বাড়ছে আকারে, আয়তনে।
কোথায় রয়েছে ওজোনের স্তর
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নিচের স্তর (ভূপৃষ্ঠ ও তার কাছাকাছি)-কে বলা হয় ‘ট্রপোস্ফিয়ার’। তার ওপরে রয়েছে আর একটি স্তর। যার নাম ‘স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার’। সেই স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের একেবারে ওপরের স্তরে রয়েছে ওজোনের পুরু চাদর। নীলাভ গ্যাসের। ভূপৃষ্ঠের সাত থেকে ২৫ কিলোমিটার বা ১১ থেকে ৪০ কিলোমিটার উঁচুতে।
এই ওজোনের পুরু চাদর অতিবেগুনি রশ্মি, সৌরকণা, মহাজাগতিক রশ্মিসহ নানা ধরনের মহাজাগতিক বিকিরণের সব প্রাণীকে রক্ষা করে।
বেরিয়ে আসছে ক্লোরিন, ব্রোমিনের মতো বিষাক্ত গ্যাস
প্রতি বছরই শীতের শেষের দিকে দক্ষিণ গোলার্ধের ওপর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তরে ফাটল দেখা দেয়। তার জন্য দায়ী সূর্য। সৌর বিকিরণই পৃথিবীর ওপরে থাকা ওজোনের চাদর ফুটো করে দেয়। তার ফলে তৈরি হয় ক্লোরিন ও ব্রোমিনের মতো রাসায়নিকভাবে অত্যন্ত সক্রিয় বিষাক্ত গ্যাস।
আকারে, আয়তনে অ্যান্টার্কটিকার চেয়েও বড়!
কোপারনিকাস অ্যাটমস্ফিয়ার মনিটারিং সার্ভিসের প্রধান ভিনসেন্ট-হেনরি পিউচ বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে নিখুঁতভাবে বলা যাচ্ছে না বায়ুমণ্ডলের ওজোনের চাদরের এই ফাটল আরও কতটা বড় হবে। আর সেটা আরও কতটা দ্রুত হারে হবে। তবে এটুকু বলা যায় ১৯৭৯ সাল থেকে এই চাদরের ফাটলের আকার বৃদ্ধি নিয়ে আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে এই ফাটলকে গভীরতম বলাই যায়। এমনকি তা দীর্ঘমেয়াদিও হতে পারে। এই ফাটল আকারে, আয়তনে অ্যান্টার্কটিকার চেয়েও বড়।’
১৯৭৯-র ফাটলের চেয়ে ২৫ শতাংশ বড়!
কোপারনিকাস অ্যাটমস্ফিয়ার মনিটরিং সার্ভিসের দেওয়া পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ১৯৭৯ সালে ওজোনের চাদরে যে ফাটল দেখা গিয়েছিল এ বছর তার চেয়েও আকারে ২৫ শতাংশ বড় ওজোনের স্তরের চাদরটি।
এর আগে বিভিন্ন গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে বায়ুমণ্ডলের ওজোনের স্তরে ফাটলের অন্যতম প্রধান কারণ একটি যৌগ।
‘ক্লোরোফ্লোরোকার্বন (সিএফসি)’। এই যৌগটি বাতাসে মিশে থাকা দূষণ কণা ‘অ্যারোসল’-কে অনেক দূরে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। রেফ্রিজারেশন ব্যবস্থা চালু ও তার দ্রুত সম্প্রসারণের জন্য গত শতাব্দীর তিনের দশক থেকে যার উৎপাদন শুরু হয়েছিল বিশ্বজুড়ে। সম্প্রতি বিশ্বের ১৯৭টি দেশে এই সিএফসির উৎপাদন নিষিদ্ধ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।