স্যাপিওসেক্সুয়াল রোমান্স!

গত কয়েক বছর ধরে নতুন একটা শব্দবন্ধ তৈরি হয়েছে। স্যাপিওসেক্সুয়াল (Sapiosexual)। বাইসেক্সুয়াল, হোমোসেক্সুয়াল বা হেটেরোসেক্সুয়াল শব্দের সঙ্গে আমরা পরিচিত। এখন স্যাপিওসেক্সুয়াল ব্যাপারটা কী?
ওই যে বললাম, চেহারা নয়, বুদ্ধিতেই যখন ঘায়েল মন। সঙ্গীর বাকচাতুর্যেই মনে প্রেমের সুড়সুড়ি। সেখানে তার পোশাক, চেহারার গড়নটা জাস্ট সেকেন্ডারি ব্যাপার। মেধার টানেই যদি প্রেম জমে ওঠে তাহলে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় তাকে বলে স্যাপিওসেক্সুয়ালিটি। মাথায় বুদ্ধির হাওয়াবাতাস যত খেলবে, প্রেমও ততটাই জমাটি হবে। স্যাপিওসেক্সুয়ালরা আর পাঁচজনের থেকে একটু আলাদা। তাদের প্রেম বা যৌনতার মাপকাঠি হয় শুধু এবং শুধুই বুদ্ধিমত্তা। মস্তিষ্কের উৎকর্ষতাই আকর্ষণের কারণ। সঙ্গী ইনটেলিজেন্ট হলে তবেই মন উচাটন, না হলে সিম্পলি ‘প্রেমে পড়া বারণ’।
স্যাপিওসেক্সুয়াল ব্যাপারটা আরও একটু খোলসা করে বলা যাক। ধরুন, এমন একজন কাউকে আপনার পছন্দ হল যার কথা বলার ধরনই মুগ্ধ করে। সে দেখতে যেমনই হোক না কেন। সাম্প্রতিক বিষয়ে জ্ঞানের নাড়ি বেশ টনটনে। ফটাফট আপনাকে রাজনীতি, কূটনীতি, খেলা, জ্ঞানবিজ্ঞান বুঝিয়ে দেবে। জেনারেল নলেজ একেবারে ঠোঁটস্থ। আপনার সঙ্গে জমিয়ে তর্কটাও করতে পারবে। অহেতুক কৌতুক করবে না, সামান্য ব্যাপার নিয়ে হাসি-মস্করাও করবে না। তার মানে সবসময় গুরুগম্ভীর কথা বলবে তা নয়, তবে বেশ গুছিয়ে টানটান করে নিজেকে পরিবেশন করবে। আপনিও বেশ বুঝবেন, পাকা মাথার মানুষ। বুদ্ধি-বিবেচনা আছে, পাঁচজনের সামনে সুন্দর করে কথা বলতেও জানে। মানে মস্তিষ্ক একেবারে নিরেট নয়, ষোলোআনা মালমশলা আছে। তেমন কাউকে যদি মনে ধরে, তাহলে আপনি স্যাপিওসেক্সুয়াল হতেই পারেন। অন্তত, সে দিকে একধাপ এগিয়েছেন।
মনোবিদরা বলেন, হোমোসেক্সুয়াল হোক বা হেটেরোসেক্সুয়াল, সঙ্গীর ‘আইকিউ’ যদি ভাললাগার কারণ হয়, তাহলে তিনি স্যাপিওসেক্সুয়ালই বটে। এখন তো আবার ‘ওপেন রিলেশনশিপ’ বা মুক্ত সম্পর্কের দিকে ঝুঁকছে জেন এক্স-জেন ওয়াই। কোনও রাখঢাক না করেই একাধিক সম্পর্কে দিব্যি ফুরফুরে মেজাজে থাকা। প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও এমন সম্পর্কের সমীকরণ তৈরি হচ্ছে। যেখানে সঙ্গীর প্রয়োজনটুকুই প্রাধান্য পাবে, জোর খাটানো চলবে না। মোদ্দা কথা, কোনও বাঁধন থাকবে না। এমন সম্পর্ক কতটা টেকসই সে কথায় আসছি না, তবে ওপেন রিলেশনশিপেও মেধা, বুদ্ধি, বাকচাতুর্য এগুলো প্রাধান্য পাচ্ছে অনেকের কাছেই। তাই এমন সম্পর্কেও স্যাপিওসেক্সুয়ালিটি সমান প্রাসঙ্গিক।
সম্পর্ক যেমনই হোক না কেন, আপনার মন কী চায় সেটাই বড় ব্যাপার। পাড়া কাঁপানো সুন্দরীর থেকে শান্ত-শিষ্ট পড়ুয়া মেয়েটির দিকেও মন ঝুঁকতে পারে ছেলেটির, আবার সুপুরুষ, ধোপদুরস্ত পোশাক আর স্টাইল স্টেটমেন্টে মহিলাদের বুকে আলোড়ন তোলা পুরুষটির তুলনায় সুন্দর কথা বলতে পারা কাউকে মনে ধরতেই পারে আপনার। মনোবিজ্ঞান বলছে, এমন অনেক স্যাপিওসেক্সুয়াল পুরুষ বা মহিলা রয়েছেন, যাঁরা বিপরীত লিঙ্গের মেধা দেখেই যৌনতার শিহরণ অনুভব করেন। শুধু তেমন মানুষের সঙ্গেই শারীরিক সম্পর্কে যেতে চান, যাঁর আইকিউ লেভেল বেশি। ক্ষুরধার বুদ্ধি আর চৌকস রসবোধ আছে।
২০০২ সাল থেকে এই স্যাপিওসেক্সুয়াল শব্দটা অনলাইনে ভাইরাল হতে শুরু করেছিল। বুদ্ধির টানে প্রেম নতুন কিছু নয়। বুদ্ধিমান মানুষকে জীবনসঙ্গী বেছে নিতে চান অনেকেই। এতদিন শুধু গালভরা এই শব্দটা পরিচিতির আড়ালে ছিল। এখন স্যাপিওসেক্সুয়ালিটি তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ পরিচিত শব্দ হয়ে উঠেছে। স্যাপিওসেক্সুয়ালকে আবার স্যাপিওফাইলদের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। স্যাপিওসেক্সুয়ালরা একইসঙ্গে মানসিক ও শারীরিক সম্পর্কের প্রতি আকৃষ্ট হন। কিন্তু স্যাপিওফাইলরা শুধুমাত্র যৌনতায় আগ্রহী। সেখানেও বুদ্ধিমত্তা প্রাধান্য পায়, তবে মনের টান থাকে না।
এখন যে প্রশ্নটা মনে ঘুরপাক খাচ্ছে তা হল, আপনি স্যাপিওসেক্সুয়াল কিনা বুঝবেন কীভাবে? দেখুন তো এই ব্যাপারগুলো মিলছে কিনা—
‘চোখে চোখে কথা বল’-র মতো দুষ্টুমিষ্টি প্রেমে পড়া নয় কিন্তু। পছন্দের মানুষটার কথা বলা, উপস্থিত বুদ্ধি, ‘সেন্স অব হিউমার’, আর পাঁচজনের সঙ্গে মেলামেশার দক্ষতা-এইসবই টানে আপনাকে।
আপনি স্মার্ট কথোপকথন পছন্দ করেন। রসিকতা ভাল লাগে তবে চটুল রসিকতা নয়, অহেতুক কৌতুক নয়, বুদ্ধিদীপ্ত কথাবার্তা মনে ধরে। যা হোক একটা বলে দিলাম নয়, পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে গুছিয়ে কথা বলাই পছন্দ আপনার। সঙ্গীর মধ্যেও এই গুণটাই চান।
ডিনার ডেটে সে কী পোশাক পরে আসছে সেটা বড় কথা নয়, নানা বিষয়ে তার কেমন জ্ঞান, আপনি কত খোলামেলা আলোচনা করতে পারছেন সেটাই বড় কথা। সঙ্গীর সঙ্গে জমিয়ে যদি একটা ডিবেট সেশন করা যায়, তাহলে তো জমে ক্ষীর।
আপনি চান সঙ্গী কখনওই আপনার চেহারা বা মেকআপ নিয়ে কথা বলবে না, বরং আপনি কোন কোন বিষয় রুচি রাখেন সেটাই হবে আলোচনার বিষয়বস্তু। সঙ্গী আপনার মন বোঝার চেষ্টা করবে, ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স নয়।
বোকা বোকা আচরণ করবে না, মার্জিত-রুচিশীল ভাব থাকবে। আপনার মুখের গড়নের চেয়ে বুদ্ধির চাকচিক্যকে গুরুত্ব দেবে বেশি।
আপনি যদি স্যাপিওসেক্সুয়াল হন, আর এই বিষয়গুলো মোটামুটি মিলে যায়, তাহলে আপনার মন বলবেই, “কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া /তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া/ চরণে ধরিয়া তব কহিব প্রকাশি/ গোপনে তোমারে, সখা, কত ভালোবাসি।”