আলোর প্রতিফলনের মাধ্যমে আমরা কিভাবে কোন বস্তু দেখতে পাই?

প্রাণিজগতের অধিকাংশ প্রাণীরই দৃষ্টিশক্তি আছে। অর্থাৎ চোখ দিয়ে আমরা আশেপাশের যে কোন বস্তুই দেখতে পাই। তবে এই দেখার জন্য যেমন দৃষ্টি শক্তির প্রয়োজন আছে, তেমনি প্রয়োজন আছে আলোর। অর্থাৎ শুধু চোখ আছে জন্যই যে আমরা যে কোন বস্তুই দেখতে পারব তা নয়। সে জন্য ওই বস্তুটিকে অবশ্যই আলোতে থাকতে হবে।
এই সাধারণ ব্যাপারটি আমরা সবাই জানি। এটুকু সাধারণ ধারণা সবারই আছে যে অন্ধকারে কোন বস্তু দেখা সম্ভব না।
কিন্তু সুস্থ চোখ এবং আলোর উপস্থিতি থাকলেই কি আমরা কোন বস্তু দেখতে পাব?
আপনি যদি ভেবে থাকেন হ্যাঁ, আমরা দেখতে পাব, তাহলে আমরা খুবই স্বচ্ছ পদার্থ যেমন খুবই স্বচ্ছ পানি বা কাঁচ কেন স্পষ্ট দেখতে পাই না? এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা এসকল বস্তু একদমই দেখতে পাই না। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে যে, এরকম অনেকেই আছেন যারা শপিং মলে স্বচ্ছ কাচের সাথে ধাক্কা খেয়েছেন কিংবা কাঁচের ভরা পানির গ্লাস কে খালি ভেবে ভুল করেছেন।
হতে পারে খানিকটা মানসিক ভুল এখানে রয়েছে। কিন্তু সেটি ছাপিয়েও একটি কারণ আছে যার কারণে আমাদের এ ধরনের ভুল হয়ে থাকে।
তো, কি সেই কারণ? কারণটি হল আলোর প্রতিফলন।
হ্যাঁ, উপরের সব কিছুই হয়তো আপনি জানেন। তবে যারা জানেন না, তারা চলুন দেখে নেওয়া যাক সম্পূর্ণ ঘটনাটি।
আলোর প্রতিফলন একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ আলোকীয় ঘটনা। আলোকরশ্মি যখন কোন বস্তুর উপর আপতিত হয়, তখন ওই বস্তুর পৃষ্ঠে আলোক রশ্মি বাঁধা পেয়ে ফিরে আসে। এই ঘটনাকে আমরা আলোর প্রতিফলন বলে থাকি।
যদিও কোন বস্তুই ১০০ ভাগ আলো প্রতিফলন করতে পারে না। খুব সামান্য হলেও আলোক রশ্মির কিছু অংশ ওই বস্তু দ্বারা শোষিত হয়।
এবার, প্রতিফলিত আলোক রশ্মি যদি আমাদের চোখে আসে তখন সেটি আমাদের চোখের লেন্সে প্রতিসরিত হয়ে চোখের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। আলো প্রতিসরিত হওয়া বা আলোর প্রতিসরণ বলতে বুঝায়, আলোর এক মাধ্যম থেকে অন্য কোন মাধ্যমে প্রবেশ করে দিক পরিবর্তন করাকে। অর্থাৎ আলোর মাধ্যম পরিবর্তন হওয়া এবং একই সাথে দিক পরিবর্তন হওয়াই হল আলোর প্রতিসরণ।

এক গুচ্ছ আলোক রশ্মি যখন নির্দিষ্ট একটি বস্তুর পৃষ্ঠে প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখের লেন্সের মধ্যে প্রবেশ করে তখন আলো বায়ু মাধ্যম থেকে চোখের লেন্স এ প্রবেশ করে। ফলে আলোক রশ্মির প্রতিসরণ হয়। এখন এই প্রতিসরিত আলোক রশ্মি গুচ্ছ চোখের রেটিনায় একটি বিম্ব গঠন করে। অর্থাৎ, যে বস্তুটির দিকে তাকিয়ে আছি তার একটি নিখুঁত ছবি গঠন করে।
মজার ব্যাপার হল রেটিনায় গঠিত এই বিম্ব টি কিন্তু উল্টো। ধরুন আপনি আপনার দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধুর দিকে তাকিয়ে আছেন, তার মানে আপনার চোখের রেটিনায় আপনার বন্ধুর একটি উল্টো ছবি তৈরি হয়েছে যেখানে পুরো পরিবেশটিই উল্টো। অর্থাৎ আকাশ নিচে আর মাটি উপরে, আপনার বন্ধুর মাথা নিচের দিকে আর পা উপরের দিকে।

উপরের চিত্রটি লক্ষ করে দেখুন, আমরা যখন কোন বস্তুর দিকে তাকাই তখন ওই বস্তুটির এমন একটি উল্টো প্রতিবিম্ব আমাদের চোখের রেটিনায় উৎপন্ন হয়।
তাহলে মনে হতে পারে যে রেটিনায় যদি উল্টো বিম্ব গঠিত হয়, তাহলে কিভাবে আমরা সবকিছু সোজা দেখি?
মূলত উল্টো বিম্ব সোজা করার এই কাজটি করে থাকে আমাদের মস্তিষ্ক।
উপরের চিত্র খেয়াল করলে দেখবেন চোখের পেছনের প্রান্তে অপটিকাল নার্ভ বা আলোক সংবেদী স্নায়ু কোষ আছে। রেটিনায় গঠিত উল্টো বিম্বটি স্নায়ু কোষের মাধ্যমে তড়িৎ সংকেত হিসেবে আমাদের মস্তিষ্কে যায়। মস্তিষ্কের অসিপিটাল লোবের সেরেব্রাল কর্টেক্স এর ভিসুয়াল কর্টেক্সে এই সংকেত প্রক্রিয়াজাত হয় এবং উল্টো বিম্ব পুনরায় সোজা হয়। ফলে আমরা যা দেখি আমাদের চোখে তার উল্টো প্রতিবিম্ব গঠিত হলেও শেষ পর্যন্ত সেটিকে আমরা সোজাই দেখি।
এখন শুরুতে দেওয়া উদাহরণের কথা বিবেচনা করা যাক। প্রথমত, কিছু স্বচ্ছ বস্তু কেন আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই না?
আমরা একটু আগেই দেখলাম যে, কোন বস্তু দেখতে হলে আলোক রশ্মি অবশ্যই ওই বস্তুর পৃষ্ঠে প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে আসতে হবে। কিন্তু বস্তুটি যদি ঠিকমত আলো প্রতিফলন না করে তাহলে?
হ্যাঁ, এমন ঘটনাটিই ঘটে থাকে যখন আমরা স্বচ্ছ কোন বস্তুর দিকে তাকাই। আলোক রশ্মি এসকল বস্তুর পৃষ্ঠে আপতিত হওয়ার পর অধিকাংশ আলো প্রতিসরিত হয়ে যায়, অর্থাৎ আলো মাধ্যম ভেদ করে চলে যায়। খুব সামান্যই আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে আসে। যে কারণে স্বচ্ছ বস্তু যেমন কাঁচ, স্বচ্ছ পানি প্রভৃতি বস্তুর দিকে তাকালে আমরা অনেকসময় কোন কিছু নেই ভেবে ভুল করে থাকি।
আবার অন্ধকারের কথা যদি বিবেচনা করা হয়, তাহলে এখানেও সে আলোর প্রতিফলনের ভূমিকাই মুখ্য। অন্ধকার অর্থ হল সেখানে কোন আলো নেই। আর যদি আলো না থাকে তাহলে কোন বস্তুর পৃষ্ঠে প্রতিফলনের ঘটনাটি ঘটতে পারে না। যে কারণে ওই বস্তু থেকে কোন আলোই আমাদের চোখে আসে না এবং আমরা ওই বস্তুটি দেখতে পাই না।
প্রাচীন কালে মানুষ মনে করত আমাদের চোখ থেকে আলো কোন বস্তুতে পড়লে তখন আমরা ওই বস্তুটি দেখতে পাই। কিন্তু ধীরে ধীরে মানুষ বুঝতে পেরেছে এই তত্ত্বটি কোন ভাবে সত্য হতে পারে না। কারণ তা হলে আমরা অন্ধকারে কোন বস্তু দেখতে পারতাম।