অন্যান্য

ভবিষ্যতের পরিবহন ব্যবস্থা ‘স্মার্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম’

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রচলিত পরিবহন ব্যবস্থা টিকে আছে তথ্যের আদান-প্রদানের মাধ্যমে। যাত্রা শুরুর সময় থেকে গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত বাস, ট্রেন বা প্লেনের মতো বিভিন্ন যানবাহন থেকে নানান ধরনের তথ্য লেনদেন করা হয়।

তাৎক্ষণিক তথ্য লেনদেনের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে এসব পরিবহনের মাধ্যমে যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে। মোটকথা এয়ারপোর্ট, রেলওয়ে অথবা বাসস্টপের মতো পরিবহন সংক্রান্ত বিভিন্ন অবকাঠামো এবং যানবাহনের মধ্যে ডেটা বা তথ্য আদান-প্রদানের ওপরই পরিবহন ব্যবস্থা নির্ভরশীল।

কিন্তু প্রচলিত পরিবহন ব্যবস্থায় কিছু বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে প্রায়ই জটিলতা দেখা দেয়। আবহাওয়া, যানবাহনের অবস্থান কিংবা ট্রাফিক মনিটরিং-এর মতো কিছু বিষয়ে সংগ্রহ করা তথ্য প্রতি মুহূর্তেই পরিবর্তিত হতে থাকে।

তবে ভবিষ্যতে তথ্য লেনদেনের এই প্রক্রিয়াই আরো আধুনিক আর উন্নত হয়ে উঠবে। তখন স্যাটেলাইট প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য ডেটা বা তথ্য সংগ্রহ ও কাজে লাগানো আরো সহজ হয়ে আসবে। মূলত ভবিষ্যতের আধুনিক এই পরিবহন ব্যবস্থা বা সিস্টেমকেই বলা হয় “স্মার্ট ট্রান্সপোর্ট”।

স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মহাকাশ থেকে আসা তথ্যের পাশাপাশি নতুন ধরনের অনেক প্রযুক্তিই ভবিষ্যতের পরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এর মাধ্যমে তখন মুহূর্তের মধ্যেই তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব হবে।

ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি যেভাবে কাজে লাগানো হবে, এবার সে সম্পর্কে ধারণা নিয়ে আসা যাক।

ভবিষ্যতের যানবাহন

স্মার্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমে প্রতিটি যানবাহনের অবস্থান, গতি এবং আশেপাশের আবহাওয়া নির্ণয়ে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যেসব তথ্য আদান-প্রদান করা হয়, সেগুলিকে বলা হয়, “স্পেস ডেটা”। সড়কের নিরাপত্তা বাড়াতে ও যাত্রীদের ভ্রমণের সুবিধার্থে এই প্রযুক্তি প্রতিনিয়তই উন্নত করা হচ্ছে।

গাড়ি

স্পেস ডেটার মাধ্যমে যানবাহনের ক্ষতি হওয়ার মতো সম্ভাব্য প্রতিকূল আবহাওয়া সহজেই শনাক্ত করা যায়। যেমন, কোনো স্যাটেলাইট যদি নির্দিষ্ট কোনো এলাকায় ঝড় হওয়ার আশঙ্কা দেখতে পায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সেই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্রে সিগন্যাল পাঠিয়ে দেবে। সেখান থেকে ওই এলাকার সব গাড়িতেই সেই সিগন্যাল চলে যাবে।

গাড়ির স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম তখন ড্রাইভারকে বিকল্প পথে যাওয়া কিংবা কাছাকাছি সার্ভিস স্টেশনে যাওয়ার পরামর্শ দিবে। এমনকি ড্রাইভার চাইলে গাড়ি যেখানে আছে, তার আশেপাশের এলাকার তথ্যও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংগ্রহ করে নিতে পারবে। ফলে যদি গাড়ির ফুয়েল বা জ্বালানি কমে যায় অথবা গাড়ির চাকা যদি কোনো রাস্তায় চলাচলে অনুপযুক্ত হয়, তাহলে ড্রাইভারকে সাথে সাথে তা জানিয়ে দেয়া হবে।

ট্রাফিক

স্মার্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের মাধ্যমে যানজট এড়াতে যেকোনো এলাকার ট্রাফিকের অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে তা কাজে লাগানো সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে পথ পরিবর্তন করে সুবিধাজনক রাস্তায় যাওয়ার জন্যে ড্রাইভারকে নির্দেশনা দেয়া যাবে। আবার কোনো গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়লে তৎক্ষণাৎ সেই গাড়ি থেকে স্যাটেলাইটে সিগন্যাল চলে যাবে। স্যাটেলাইট তখন ইমার্জেন্সি সার্ভিসকে সেই গাড়ির লোকেশন জানিয়ে দিবে।

এতে যেমন ভ্রমণে সময় কম লাগবে, তেমন দুর্ঘটনায় পড়া কোনো যানবাহন অনেক কম সময়ে উদ্ধার করা যাবে।

ভবিষ্যতের গণপরিবহন

স্পেস ডেটার মাধ্যমে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা গণপরিবহন ব্যবহারের অভিজ্ঞতাতেও পরিবর্তন আসবে। স্মার্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের প্রচলন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রাপথের বিভিন্ন বাঁধা-বিপত্তি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। ফলে সবার জন্যেই যাতায়াত সহজ হয়ে যাবে।

বাস

ভবিষ্যতে যেকোনো যাত্রী প্রয়োজনের সময় তার নিকটবর্তী বাসে সিগন্যাল পাঠাতে পারবেন। ফলে বাস সেই সিগন্যালের মাধ্যমে যাত্রীদের লোকেশন নির্ণয় করে তাদেরকে নিয়ে আসবে। ফলে কাউকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। ড্রাইভার এবং যাত্রীদের মধ্যে এই যোগাযোগের ফলে অনেক সমস্যাই কমে আসবে।

ট্রেন

ট্রেনের সময়সূচিতে গড়মিল হলে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সিগন্যাল আকারে সেই তথ্য যাত্রীদের কাছে পৌঁছে যাবে। এছাড়াও যাত্রাপথে ট্রেনে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে অথবা সার্ভিসিং বা মেরামতের প্রয়োজন হলে তা সাথে সাথেই রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থাকে জানিয়ে দেয়া হবে। এতে সংঘর্ষের মতো বড় ধরনের যেকোনো দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

ট্রেনের মতো উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণেও স্পেস ডেটা ব্যবহৃত হবে। ফলে আকাশপথে ভ্রমণের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

জাহাজ

যখন কোনো জাহাজের বন্দরে ভেড়ার প্রয়োজন হবে, তখন সঙ্গে সঙ্গে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বন্দরে সিগন্যাল পাঠানো হবে। প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেয়ার জন্যে জাহাজের কার্গো, গতিবিধি এবং লোকেশন সম্পর্কিত তথ্য বন্দরের কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

এছাড়াও স্মার্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের মাধ্যমে বন্দরের আশেপাশের এলাকার দূষণ পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। দূষণের পরিমাণ বেশি হলে বন্দর থেকে জাহাজে দূষণের সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে সিগন্যাল পাঠানো হবে।

ড্রোনের ব্যবহার

ডেলিভারি সার্ভিসের সুবিধার জন্যে ভবিষ্যতে ড্রোন ব্যবহার করা হবে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রতিটি ড্রোনের লোকেশন ও গমনপথ অনুসরণ করা হবে। ড্রোনগুলি যাতে পথে কোনো বাধার সম্মুখীন না হয়, তাও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে।

পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেই এখন স্যাটেলাইট ডেটা ব্যবহৃত হচ্ছে। এই প্রযুক্তির ব্যবহার এভাবে বাড়তে থাকলে নিকট ভবিষ্যতেই আমরা স্মার্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের সুফল ভোগ করতে পারবো।

Facebook Comments

Related Articles

Back to top button