ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মধ্য দিয়ে তথ্য কীভাবে যায়

তথ্য বা ডেটা আদান-প্রদান করার অনেক ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ কপার তার এবং বেতার তরঙ্গের মতো কয়েকটি পদ্ধতি বহুল প্রচলিত। তথ্য আদান-প্রদানের একটি মাধ্যম হলো ফাইবার অপটিক তার বা ক্যাবল। তবে সাধারণ তারের মতো এর মধ্য দিয়ে তরঙ্গ নয় বরং আলো ব্যবহার করে তথ্য প্রেরণ করা হয়। তথ্যকে আলোকরশ্মিতে কোড করে একটি ফাইবার, কাচ বা প্লাস্টিকের পাইপে প্রেরণ করা হয়।
১৯৫০-এর দশকে প্রথম বারের মতো চিকিৎসকদের কাজে সহায়তা করার জন্য এই প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা হয়। এর মাধ্যমে চিকিৎসকরা সার্জারি ছাড়াই এন্ডোস্কোপি ব্যবহার করে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ছবি ধারণ করতে পারতেন। তবে মাত্র এক দশকের মধ্যেই এই প্রযুক্তিতে টেলিফোন সংযোগের মাধ্যমে আলোর গতিতে তথ্য প্রেরণে ব্যবহৃত হতে থাকে।
ফাইবার অপটিক প্রযুক্তিতে কী আছে?
একটি ফাইবার অপটিক ক্যাবল বহুসংখ্যক অপটিক্যাল ফাইবারের সমন্বয়ে তৈরি হয়। অপটিক্যাল ফাইবার হলো প্লাস্টিক বা কাচের খুবই পাতলা তন্তু। একটি অপটিক্যাল ক্যাবলে দুটি থেকে শুরু করে কয়েকশো ফাইবার থাকতে পারে। প্রতিটি ফাইবার মানুষের চুলের চেয়েও পাতলা এবং হাজার হাজার টেলিফোন কল ট্রান্সমিট করতে পারে। সম্পূর্ণ আলোক ভিত্তিক এই প্রযুক্তির মাধ্যমে একজন প্রেরণকারী এবং গ্রহণকারীর মধ্যে তথ্য বা ডেটা পরিবাহিত হয়।
প্রথমে তথ্য প্রেরণকারী যন্ত্র লেজার ডিভাইস ব্যবহার করে তথ্যকে আলোক স্পন্দনে রূপান্তর করে। এরপরে এই আলোর স্পন্দন ফাইবার অপটিক কেবলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং অপর প্রান্তে গিয়ে শনাক্ত করা হয়। অন্য প্রান্তে কল গ্রহণকারী ডিভাইস একটি লাইট ডিটেকটর বা ফটো ইলেকট্রিক সেল ব্যবহার করে ওই আলোর স্পন্দনকে পুনরায় মূল তথ্যে রূপান্তরিত করে।
এই প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে?
আলোর স্পন্দনগুলি মূলত আলোর অতি ক্ষুদ্র কণা। এসব কণা ফাইবার অপটিক তারের প্রতিটি অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে প্রতিক্ষেপণের মাধ্যমে তীব্র গতিতে চলাচল করে। মূলত পূর্ণ অভ্যন্তরীন প্রতিফলন এবং ক্যাবলের কাঠামো, এই দুটি পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে পাইপের ভেতরে আলো ধরে রাখা হয়। স্বচ্ছ কাচের ফিলামেন্টের ভেতর দিয়ে চলাচল করার সময় এর প্রান্ত দিয়ে আলো বেরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু আলো যদি তীর্যকভাবে নির্দিষ্ট কোণে কাচে আঘাত করে, তাহলে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন ঘটে এবং আলো কাচের ফিলামেন্টের ভেতরেই থাকে।
অপটিক্যাল কেবল মূলত দুটি ভিন্ন অংশের সমন্বয়ে গঠিত। কেবলের একটি মূল অংশ থাকে, যেখান দিয়ে আলো চলাচল করে। সেটা থাকে মাঝখানে। আর সেই মূল অংশের চারিদিকে কাচের আবরণ দিয়ে ঘেরা থাকে, যা আলোর সংকেত বা সিগনালকে মূল অংশ থেকে বের হতে দেয় না।
এই প্রযুক্তি কীসে ব্যবহৃত হয়?
কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এবং ব্রডকাস্টিং সহ নানা কাজে ব্যবহৃত হয় এই ফাইবার অপটিক ক্যাবল। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অপচয় ও প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই উচ্চ ব্যান্ডউইডথের মাধ্যমে তথ্য প্রেরণে সহায়তা করে ফাইবার অপটিক ক্যাবল। এতে অপারেশন এবং মেইনটেনেন্স খরচ অনেক কমে আসে।
সাধারণ কপার ক্যাবলের মধ্য দিয়ে তথ্য প্রেরণের সময় যে তড়িৎচৌম্বকীয় বাঁধা (electromagnetic interference) তৈরি হয়, ফাইবার অপটিক ক্যাবলের ক্ষেত্রে সেরকম কোনো বাঁধা-বিপত্তি তৈরি হয় না। আর এর মধ্য দিয়ে একবারে অনেক বেশি পরিমাণে তথ্য পাঠানো যায়। তথ্য প্রেরণে উচ্চক্ষমতা এবং শক্তিশালী সিগনালের জন্যে আধুনিক সব ব্রডকাস্টিং প্রতিষ্ঠানে ফাইবার অপটিক ক্যাবল ব্যবহার করা হয়।