প্রজেক্ট নিউরালিংক: মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত হবে চিপ

মানুষের মস্তিষ্ককে কম্পিউটারের সঙ্গে জুড়তে নতুন কোম্পানি খুলেছেন টেসলার প্রধান নির্বাহী এলন মাস্ক। কোম্পানিটির নাম দেওয়া হয়েছে নিউরালিংক
২০১৬ সালে মাস্ক নিউরালিংক প্রতিষ্ঠা করলেও এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম খুবই গোপন থেকেছে। এই প্রতিষ্ঠান মানুষের মস্তিষ্কে বাড়তি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যোগ করতে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ করছে। নিউরালিংককে ব্রেন-মেশিন ইন্টারফেস কোম্পানি বলা হচ্ছে।
২০১৯ সালের কোম্পানি প্রদত্ত তথ্য অনুসারে কোম্পানিটির সদস্য ৯০ জন। যাদের বেশীরভাগই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজিস্ট। নিউরালিংকে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ১৫৮ মিলিয়ন ডলার (২০১৯ পর্যন্ত) যার মধ্যে ১০০ মিলিয়নের-ই বিনিয়োগকারী স্বয়ং মাস্ক।
ইলন মাস্ক ছাড়াও নিউরালিংকে বিনিয়োগ করেছেন মেক্স হডাক, বেলন রেপোর্ট, পল সেরোলা, ফিলিপ সেভেস, টিস গার্ডনার প্রমুখ।
সম্প্রতি নিউরালিংক থেকে “নিউরালিংক চিপ” নামক একটি যন্ত্র প্রদর্শন করা হয়েছে, যা গোপনে কাজ করা কোম্পানিটির অগ্রগতি সম্পর্কে মানুষের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। নিউরালিংক উচ্চ ব্যান্ডউইথের ব্রেন-মেশিন ইন্টারফেস তৈরি করছে, যা মানুষ ও যন্ত্রকে যুক্ত করবে। নিউরালিংকের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের মস্তিষ্কে বিশেষ চিপ যুক্ত করা, যাতে মানুষ তাদের ফোন ও কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে হাতের স্পর্শ ছাড়া, শুধুমাত্র ইচ্ছা দ্বারা।
এর পাশাপাশি ‘নিউরাল লেস’ প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করছে নিউরালিংক। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কে ছোট ছোট ইলেকট্রোড বসানো হবে। আর সেই ইলেকট্রোডের মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্ক কোনো কাঠামো ছাড়াই সরাসরি যন্ত্রের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারবে।
এতে মানুষের স্মৃতির ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও যোগ করা যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের প্রযুক্তির উন্নতি হলে একসময় নিজেদের চিন্তাভাবনা যন্ত্রের মধ্যে আপলোড ও তা থেকে পরে ডাউনলোড করতে পারবে মানুষ।
নিউরালিংক চিপ এর কাজ প্রায় শেষের দিকে। কিছু দিনের ভেতরেই এটি মানবদেহে বসানো হবে। শূকরের দেহে এটি সফলভাবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। মানুষের মাথায় একটি কয়েন আকৃতির ছিদ্র করে এই চিপটি ব্যাথাহীন ভাবে বসানো হবে।
এটি বা এইধরনের চিপ বসানোর ফলে মানুষকে আর বহু চর্চা, পরিশ্রম বা চেষ্টার দ্বারা কোনো কিছু আয়ত্ত করতে হবে না। আপনি একটি বই সৃতিতে ধারন করতে চাইলে শুধুমাত্র ওই বইটিকে চিপে আপলোড করতে হবে। তাহলেই আপনি ওই বইটিকে চিরদিনের জন্য মনে রাখতে পারবেন। এর পাশাপাশি আপনি যদি কোনো কিছু চিন্তা করেন বা পরিকল্পনা করেন তাহলে সেটি সহজেই জানতে পারবে ওই চিপ নির্মাতা বা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান। আপনার ব্যাংক একাউন্টের তথ্য থেকে আপনার কোনো গোপন স্বপ্ন কোনো কিছুই আর গোপন থাকবে না। এমনকি আপনি কখন কি করছেন তার সবকিছুর রিয়েল টাইম তথ্য চলে যাবে এই চিপগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যাক্তির কাছে। আপনার স্ত্রীর সাথে সহবাসের প্রতিটি মূহুর্তের তথ্য ধারনেও সক্ষম হবে একটি গোষ্টী। অর্থাৎ আপনার স্বকীয়তা বা ব্যাক্তিগত গোপনীয়তা বলে কিছুই থাকবে না।
এতো গেলো কেবল আপনার তথ্য ছিনতাই এর কথা। কিন্ত এরা শুধু এতেই সন্তষ্ট নয়। এরা আপনার দেহকেও নিয়ন্ত্রণ করবে।
কিভাবে?
একটি উদাহরণ দেখুন,আপনি পুরুষ তাই নারীর প্রতি আপনি আকর্ষিত। কিন্ত এরা অপনার দেহে নারীর হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেবে মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে। ফলে আপনি ধীরে ধীরে হয়ে উঠবেন সমকামী৷ পুরুষ হয়েও পুরুষের প্রতি আকর্ষিত। পারিপার্শ্বিক উদ্দীপনাসহ বা ব্যাতীত মস্তিষ্ক হরমোন ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
ঠিক এমনিভাবে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত বা এরকম কিছু পর্যবেক্ষণ করা শিশুদের দেহে সময়ের আগেই হরমোন ক্ষরণ শুরু হয়। তবে সে অনুপাতে তাদের মানসিক পরিপক্বতা না হওয়ায় তারা বিপথগামী হয়ে যায়। এরা আপনার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করবে। ধরুন আপনি জানেন মদ হারাম, এটি পান করা নিষিদ্ধ। কিন্ত এই চিপ আপনার মস্তিষ্কের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। তাই আপনার স্মৃতি থেকে মদ সংশ্লিষ্ট সকল নেগেটিভ তথ্য উধাও করে দেয়া হবে। ফলে আপনি মদকে পান করতে দ্বিধা করবেন না৷ কিন্ত কোনো মানুষ কেন এই চিপকে দেহে লাগাবে? যেহেতু কোনো মানুষ স্বেচ্ছায় এই প্রযুক্তিগুলো গ্রহণ করবে না, তাই তারা একে উপকারী হিসেবে প্রচার করবে।
যেমন এর দ্বারা চিকিৎসা করলে রোগ নিরাময় হবে, প্রতিবন্ধীরা উপকৃত হবে, মানুষ সহজে যোগাযোগ করতে পারবে ইত্যাদি। এই চিপটি অনেক উন্নত প্রযুক্তির। তাই এর দাম অনেক বেশী হওয়ার কথা। কিন্ত এর দাম হবে অনেক কম, এমনটা জানিয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।