অন্যান্য

ওয়াইফাই প্রযুক্তির যুগে লাইফাই কতটুকু কার্যকর?

লাইফাই (LiFi হিসাবেও লিখিত) হলো এমন একটি তারবিহীন যোগাযোগ প্রযুক্তি যা ডিভাইসের মধ্যে ডেটা এবং উপাত্ত স্থানান্তরে কাজ করে। এই শব্দটি হরাল্ড হাশ (Harald Haas) এডিনবার্গে ২০১১ সালে টিইডি-গ্লোবাল আলোচনার সময় প্রথম প্রবর্তন করেছিলেন।

অর্থাৎ, মার্চ ২০১১ সালে এটি সর্বপ্রথম প্রবর্তিত হয়। কোনো কোনো সূত্রানুসারে, দৃশ্যমান আলোর রেঞ্জ বা পরিসর ছাড়াও এটি অতিবেগুনি এবং অবলোহিত রশ্মি অঞ্চলে কাজ করে।
প্রযুক্তিগত ভাষায়, লাই-ফাই একটি বিশেষ যোগাযোগ ব্যবস্থা যা দৃশ্যমান আলো, অতিবেগুনী এবং ইনফ্রারেড বর্ণালীগুলির থেকে বেশি গতিতে ডেটা স্থানান্তরে করতে সক্ষম।প্রধানত, লাইফাই এলইডি ল্যাম্পের মাধ্যমে কাজ করে ৷

এলইডি ল্যাম্প বা এলইডি বাতি অত্যন্ত দ্রুত ও অনবরত বন্ধ ও চালু হওয়ার মাধ্যমে কাজ করে৷ রিসিভার ডিভাইসে থাকা সেন্সরগুলো সিগন্যাল গ্রহণ করে৷ সিগন্যাল ট্রান্সমিটারের গতিও অনেক৷ লাইফাই অত্যন্ত বিস্তৃত স্পেকট্রাম ব্যবহার করে৷ সিলিং লাইট থেকে তারহীন প্রযুক্তিতে তথ্যও দ্রুত সরবরাহ করা যায়৷ তবে একটি প্রশ্ন, এটি কি আমাদের দৃষ্টিশক্তির পক্ষে ক্ষতিকর?

“ফ্রাউনহফার হাইনরিশ হারৎস” ইন্সটিটিউটের আনাগ্নোস্টিস পারাস্কেভোপিওস বলেন, ‘‘প্রশ্ন হচ্ছে এটা কি সারাক্ষণ মিটমিট করে জ্বলে?” উত্তর হচ্ছে,” না”। যা এখানে আমরা দেখতে পাই এক্ষেত্রে খুব চমৎকার সামঞ্জস্য আনা হয়েছে৷ সেটা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে চোখের পক্ষে সনাক্ত করা সম্ভব না হয়৷” এখানে জ্বলতে থাকা সবুজ আলোগুলো শুধু ডিজাইন উপকরণ হিসেবে কাজ করছে৷ বার্লিনের বিজ্ঞানীরা এই ডিভাইসগুলো সম্প্রতি তৈরি করেছেন৷ সবুজ আলো দেখলে বোঝা যায় যে এগুলো কাজ করছে৷

এই অপটিক্যাল তারহীন ব্যবস্থা কাজ করার ক্ষেত্রে পূর্বশর্ত হচ্ছে, তথ্য প্রেরণ আর গ্রহণ করার যন্ত্রের মধ্যে ভিজ্যুয়াল সংযোগ থাকতে হবে৷

আলোর গতিপথ যদি বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে সিগন্যাল পাওয়া যাবে না৷ তথ্য সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে৷

“উনহফার হাইনরিশ হারৎস” ইন্সটিটিউটের আনাগ্নোস্টিস পারাস্কেভোপিওস বলেন, ‘‘অপটিক্যাল ডেটা কানেকশনের একটি সুবিধা হচ্ছে এটাকে সহজেই এক ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায়৷ এজন্য আমার শুধু জানালার পর্দা নামিয়ে ফেলতে হবে৷ আর তখন এই ব্যবস্থায় সরবরাহ করা সব তথ্য ঘরের মধ্যেই থেকে যাবে৷ রেডিও লিংকের সঙ্গে তুলনা করলে এটা একটা বড় সুবিধা৷ কারণ, অন্য ব্যবস্থায় ঘরের বাইরে থাকা ডিভাইসও একই তথ্য গ্রহণ করার সুযোগ থেকে যায়৷” তথ্য সরবরাহের এই ব্যবস্থায় বাইরে থেকে বিঘ্ন ঘটানোও সম্ভব নয়৷

আনাগ্নোস্টিস বলেন, ‘‘আমার মত হচ্ছে এই প্রযুক্তি প্রথমে একটি শিল্পখাতে প্রয়োগ করা উচিত৷ কেননা সেখানেই এটির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রয়েছে৷ এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা নির্দিষ্ট কিছু চাহিদা পূরণ করতে পারি এবং একইসঙ্গে এটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের আরো সুযোগ রয়েছে৷”

পরবর্তীতে আলোর মাধ্যমে তথ্য সরবরাহের এই ব্যবস্থা আমাদের নিত্যদিনের কাজকর্মেও ব্যবহার করা যাবে৷ যেমন, মিউজিয়াম এবং গণপরিবহনে এটা কাজে লাগতে পারে৷ বিশেষ করে এমন পরিবেশে যেখানে একসঙ্গে অনেক মানুষ রয়েছে কিংবা যেখানে সাধারণ তারহীন প্রযুক্তি ব্যবহারে জটিলতা রয়েছে৷ তবে, সেসবের আগে বেশি কিছু সমস্যাও সমাধান করতে হবে৷

গবেষকরা আগামী তিন বছরের মধ্যে এসব সমস্যা সমাধানের আশা করছেন৷ আর তখন নিত্যদিনে ব্যবহার করা যাবে লাইফাই৷
ব্যবহারিক ক্ষেত্রে, প্রযুক্তিটি ওয়াই-ফাইয়ের সাথে কিছুটা সাদৃশ্যযুক্ত – মূল প্রযুক্তিগত পার্থক্য হ’ল ওয়াইফাই তথ্য প্রেরণে অ্যান্টেনায় ভোল্টেজ স্থানান্তরে Wi-Fi রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে, অন্যদিকে লাই-ফাই আলোর তীব্রতার মডিউলেশান ব্যবহার করে তথ্য প্রেরণ করে। লাই-ফাই তাত্ত্বিকভাবে 100 গিগাবাইট / সেকেন্ডের গতিতে ডেটা স্থানান্তর করতে পারে।লাই-ফাইয়ের অঞ্চলগুলিতে নিরাপদে কাজ করার সুবিধার পাশাপাশি বৈদ্যুতিক চৌম্বকীয় সংবেদনশীলতা (উদাঃ বিমানের কেবিন, হাসপাতাল, সামরিক) -প্রভৃতি কারণে বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি সংস্থা এই প্রযুক্তিটির বিকাশে কাজ করছে।

Facebook Comments

Related Articles

Back to top button