অন্যান্য

ফেসবুক আর অ্যাপলের দ্বন্দে হেরে গেলো ফেসবুক!

অবশেষে ফেসবুক এর অনুরোধ উপেক্ষা করে তাদের বহুল আলোচিত আইওএস ১৪.৫ ভার্সন (iOS 14.5) রিলিজ করলো অ্যাপল! ভার্সন তো অহরহই রিলিজ হয়, তাহলে এই ভার্ষনটা কেনো এতো আলোচিত! একটু খুলে বলা যাক! অ্যাপল এর প্রাইভেসি পলিসি বিশ্ব সেরা, তা এতোটাই স্ট্রং এবং নিরাপদ যে পৃথিবী উলপ পালট হয়ে গেলেও তারা তাদের গ্রাহক প্রাইভেসি কারো সাথে কম্প্রোমাইজ করেনা!

একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার হবে; ২০১৬ সালে কলিফোর্নিয়ার স্যানবার্নিডিনো তে যে গোলগুলি এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিলো, সেই ঘটনার অভিযুক্ত দুজনই ঘটনাস্থলেই নিহত হয়, তারপর তদন্তের সার্থে এফবিআই তাদের ব্যাবহৃত আইফোন টি আনলক করে দিতে অ্যাপল কে অনুরোধ জানায় কিন্তু অ্যাপল এটা তাদের প্রাইভেসি এ্যাক্টের বিরোধী বলে সে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে! সেই ঘটনা সারা আমেরিকায় ব্যাপক সাড়া ফেলে! অবশেষে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওবামাও অ্যাপলকে অনুরোধ করেন কিন্তু অ্যাপল সে অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করে! ভাবা যায় একটা দেশের আইন কানুন কতটা শক্তিশালী হলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে! প্রশ্ন আসতে পারে কেউ যদি অ্যাপলের সেই প্রাইভেসি ভঙ্গ করেই তাতে কি হবে! অনেক কিছুই হবে! অ্যাপল যদি আদালতে যায় এবং প্রমান করতে পারে তাহলে সে দেশের প্রেসিডেন্ট হউক আর কোন প্রভাবশালী সরকারী গোয়েন্দা সংস্থা হউক আদালত কারো বিরুদ্ধেই রায় দিতে দ্বিধা করবেনা! এই ভয়ে আমেরিকার সবাই তটস্থ থাকে! শেষ পর্যুন্ত অস্ট্রেলিয়ান একটা হ্যাকারস গ্রুপ সম্ভাবত সেই ফোনটি আনলক করতে পেরেছিলো বলে শোনা যায়!

আসল প্রসঙ্গে আসি! অ্যাপল যেখানে তার গ্রাহকদের প্রাইভেসির ব্যাপারে এতোটাই সতর্ক সেখানে ফেসবুক ততটাই উদাসীন! শুধু তাই নয় ফেসবুক তাদের গ্রাহকদের তথ্য এর আগে বিক্রি করেও খাইছে! অ্যাপল এই ব্যাপারগুলি ভালোভাবে নেয়নি! তারা সিদ্ধান্ত নেয় তাদের ডিভাইসে ব্যাবহৃত ফেসবুক এ্যাপে আরও কট্টোর প্রাইভেসি আরোপ করবে! সেটা শুনে ফেসবুকের ঘুম হারাম হয়ে যায়, কারন তারা যে ধরনের কড়াকড়ি আরোপের কথা বলছে, সেটা করলে ফেসবুকের ব্যাবসা লাটে উঠবে! কারন ফেসবুক আপনার আমার দু চারটা স্টেটাস, আর লাইক কমেন্টে চলেনা! তাদের মূল ব্যাবসা হলো এ্যাডে! অ্যাপলের গ্রাহকের বিনা অনুমতিতেই তাদের ব্যাক্তিগত এবং ডেমোগ্রাফিক তথ্য ফেসবুক ব্যাবহার করে সে অনুযায়ী এ্যাড প্রচার করতে পারে, আবার চাইলে আরও অনেক কিছুই করতে পারে! সেজন্য শুরু হয় অ্যাপলের সাথে দেনদরবার! কিন্তু লাভ হয়না! শেষ পর্যুন্ত অ্যাপল তাদের সেই বহুল আলোচিত আপডেট কাল রিলিজ করেছে! এই আপডেটের ফলে অ্যাপল গ্রাহকগন চাইলে ফেসবুকের ট্র্যাকিং অপশন বন্ধ রাখতে পারবে ফলে আপনি যেখানেই যান, ফেসবুক সে লোকেশন জেনে সে অনুযায়ী এ্যাড আর আপনার ফোনে চালাতে পারবেনা! অনেকে খেয়াল করে থাকবেন যে আপনি গুগলে কিছু ব্রাউজ করে বা অ্যামাজনে কোন প্রডাক্ট দেখে একটু পর ফেসবুকে ঢুকলে সংগে সংগে দেখবেন সেই প্রোডাক্টের এ্যাডগুলি আপনার স্ক্রিনে চলে আসে, এটা ফেসবুক আপনার ব্রাউজ হিস্টরী রিড করে করে!

অ্যাপলের নতুন রেসট্রিক্টশনের এই অপশন কে বলা হয় “এ্যাপ ট্র্যাকিং ট্রান্সপারেন্সি”! এটা আইফোনের জনক স্টিভ জবেরই কনসেপ্ট ছিলো, যা এতোদিন এ্যাপ্লাই করা হয়নি! এক জরিপে দেখা গেছে মাত্র ১০% গ্রাহক ফেসবুকে তাদের তথ্য শেয়ার করতে রাজি হয়েছে!
এবার দেখা যাক ফেসবুক আপনার কি কি তথ্যের একসেস আপনার বিনা অনুমতিতেই পেয়ে যেতো:
– Physical address
– Email address
– Name
– phone number
– User ID
– Purchase History
– Financial Information
– Precise/Coarse Location
– Contacts
– Photos or Videos
– Gameplay Content
– Search History
– Browsing Data
– Product Interaction
– Advertising Data
– Crash Data
– Performance Data
বাকি থাকলো কি বলেন! একজন গ্রাহকের এতোসব তথ্য যদি প্রাইভেসির ব্যাপারে উদাসীন একটা কোম্পানি একসেস করতে পারে, তাহলে এই তথ্য দিয়ে তারা অনেক কিছু করতে পারে, কাজেই ব্যাবহারকারী হিসেবে আপনার প্রাইভেসি রাইট একসেস এখন আপনার হাতে! আপনিই সিদ্ধান্ত নিবেন আপনার তথ্য কে কোথায় কিভাবে ব্যাবহার করবে!
Facebook Comments

Related Articles

Back to top button