ভ্যাকসিন কী? এটি কী দিয়ে তৈরি হয়? কীভাবে তৈরি হয়?

রিসাস ম্যাকাকস। মুখটা গোলাপি। বাঁদরের এই বিশেষ প্রজাতির সঙ্গে মানুষের ডিএনএ–এর অনেক মিল। অক্সফোর্ডের পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনটা মানুষের শরীরে পরীক্ষা করার আগে বাঁদরের এই প্রজাতির ওপর পরীক্ষা করা হয়েছিল। ৬টি বাঁদরকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পর করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে রাখা হয় ২৮ দিন। এদের কারও শরীরেই করোনার আক্রমণ হয়নি। এই ফলাফল নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক।
অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিনের মানবদেহের পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি অ্যাস্ট্রা জেনিকার সঙ্গে ব্যাপক হারে ভ্যাকসিন উৎপাদন এবং সরবরাহের জন্য চুক্তি করেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১০০টির মতো ভ্যাকসিন গবেষণায় বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। ভ্যাকসিন গবেষণার অতীতের সাফল্যের নিরিখে বলা যায় ১০০টির মধ্যে হয়তো ৬–৭টি ভ্যাকসিন কার্যকর হতে পারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এত দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি এবং মানবদেহে প্রয়োগের এমন নজির আর নেই।
পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন গুলোতে মোটামুটি দুই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ভাইরাসের অতি ক্ষুদ্র একটি দুর্বল অংশ শরীরে প্রয়োগ করে ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের রোগ প্রতিরোধী অংশকে সক্রিয় করা এবং ওই ভাইরাসকে মনে রাখা। যাতে করে পরবর্তীতে সত্যিকার আক্রমণ ঠেকানো যায়। এটি প্রচলিত পদ্ধতি। বাজারের অধিকাংশ ভ্যাকসিন এই পদ্ধতিতে তৈরি।
বিশ্বের অধিকাংশ ভ্যাকসিন তৈরির কারখানাগুলো এই পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন তৈরি করতে সক্ষম। নিরাপদ উৎপাদনে পদ্ধতি এবং পরীক্ষার সম্যক ধারণা রয়েছে তাদের। এই পদ্ধতিতে তৈরি ভ্যাকসিনগুলো ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ঠিক থাকে। কিন্তু সমস্যা একটাই উৎপাদনে প্রচুর পরিমাণ কাঁচামালের দরকার। পরিমাণটা শুনবেন? একজনের শরীরে দেওয়ার জন্য ভ্যাকসিন বানাতে এক টনেরও বেশি কাঁচামাল লাগে। বুঝতেই পারছেন এই পদ্ধতিতে উৎপাদনের সময়টা একটু বেশি লাগে। অক্সফোর্ডের পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনটা এই পদ্ধতিতে তৈরি।
দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো আরএনএ এবং ডিএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ভাইরাসের ক্ষুদ্র অংশ বা অ্যান্টিজেন ভ্যাকসিন হিসেবে দেওয়া হয় না। ওই ক্ষুদ্র অংশ তৈরির জন্য সংকেতটিকে পাঠানো হয় শরীরে। শরীর তখন এই অ্যান্টিজেন তৈরি করতে থাকে। কার্যকরী হয় আমাদের প্রতিরোধী ব্যবস্থা। আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা মনে রাখে এই ভাইরাসের ধরন। যাতে করে ভবিষ্যতে আমাদের শরীরে এই ভাইরাস আক্রমণ করলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়।
নতুন এই আরএনএ প্রযুক্তিতে এখন পর্যন্ত কোনো ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি। এই ভ্যাকসিনের উৎপাদন ব্যয় বেশ কম। খুব অল্প পরিমাণ ওষুধে কাজ হয়। তবে ব্যাপক হারে উৎপাদন করতে নতুন কারখানা তৈরি করতে হবে। প্রশিক্ষণ দিতে হবে ভ্যাকসিন উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতদের। এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করার জন্য দরকার হবে -৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। বুঝতেই পারছেন বিশ্বের অনেক দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া আর একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
বিশ্বব্যাপী করোনার প্রকোপ রুখতে প্রাথমিকভাবে ৭০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দরকার। একটা ভ্যাকসিন যদি ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কাজ করে তাহলেও করোনাকে রুখে দেওয়া যাবে। পাঠক বলে রাখি, গুটি বসন্ত ছাড়া শতভাগ কার্যকরী অন্য কোনো ভ্যাকসিন এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি।
লেখকঃ সুব্রত বোস