বিয়ের আগে রক্তের গ্রুপ জেনে নেয়া ভাল কেন?

স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ নিয়ে আগে তেমন আলোচনা না হলেও বর্তমানে এটা একটা বিশাল সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। প্রযুক্তির আধুনিকায়নের ফলে আমরা নিত্য নতুন বিষয়াবলী সম্পর্কে জানতে পারছি। তন্মধ্যে একটা বিষয় হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ। আজ আমরা জানব স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপের কারণে কী কী সমস্যা হতে পারে।
রক্তের গ্রুপ:
প্রথমেই রক্তের গ্রুপগুলো সম্পর্কে জেনে নিন। রক্তের গ্রুপের প্রধানত দুটি ভাগ। একটা হল এবিও(ABO) পদ্ধতি {এ(A), বি(B), এবি(AB) এবং ও(O)} অন্যটা আরএইচ ফ্যাক্টর {আরএইচ(Rh+) পজেটিভ এবং আরএইচ(Rh-) নেগেটিভ}। এ রেসাস ফ্যাক্টরই ঠিক করে দেয় ব্লাড গ্রুপ পজেটিভ হবে না নেগেটিভ হবে। ব্লাড গ্রুপগুলো হলো :এ পজেটিভ, এ নেগেটিভ, বি পজেটিভ, বি নেগেটিভ, এবি পজেটিভ, এবি নেগেটিভ, ও পজেটিভ এবং ও নেগেটিভ।
স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ
স্বামীর রক্তের গ্রুপ যদি পজেটিভ হয় তাহলে স্ত্রীর পজেটিভ হতে হবে। আর যদি স্বামীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হয় তাহলে স্ত্রীর পজেটিভ বা নেগেটিভ যে কোনো একটি হলেই হবে। তবে স্বামীর গ্রুপ যদি পজেটিভ হয় তাহলে কোনভাবেই স্ত্রীর রক্তের নেগেটিভ হওয়া চলবে না। এ ক্ষেত্রে স্ত্রীর গ্রুপ যদি নেগেটিভ হয়, তাহলে তার স্বামীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হলে অনেক সমস্যা এড়ানো যাবে।
স্বামীর রক্তের গ্রুপ + স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ = সন্তানের অবস্থান
পজেটিভ(+) + পজেটিভ(+) = সুস্থ সন্তান
নেগেটিভ(-) + নেগেটিভ(-) = সুস্থ সন্তান
নেগেটিভ(-) + পজেটিভ(+) = সুস্থ সন্তান
পজিটিভ(+) + নেগেটিভ(-) = প্রথম সন্তান সুস্থ, দ্বিতীয় সন্তান থেকে সমস্যা
স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজেটিভ এবং স্ত্রীর নেগেটিভ হলে কী হতে পারে
স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ মিলে গেলে কোন সমস্যা হয় না। তবে স্ত্রী যদি নেগেটিভ হয় আর স্বামী যদি পজেটিভ হয় তাহলে ‘লিথান জিন’ বা ‘মারণ জিন’ নাকে একটি জিন তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে জাইগোট তৈরিতে বাধা দেয় বা জাইগোট মেরে ফেলে।
সেক্ষেত্রে মৃত বাচ্চার জন্ম হতে পারে। বাচ্চা হতে পারে জন্মান্ধ। এছাড়া যখন কোন নেগেটিভ গ্রুপের মা পজেটিভ ফিটাস (ভ্রুণ) ধারণ করে তখন সাধারণত প্রথম বাচ্চার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু ডেলিভারির সময় পজেটিভ ভ্রুণের রক্ত, প্লাসেন্টারের (গর্ভফুল) বাধা ভেদ করে মায়ের শরীরে প্রবেশ করবে। মায়ের শরীরেও প্রসবের সময় যে রক্ত প্রবেশ করবে, তা প্রসবের কয়েক মাসের মধ্যেই মায়ের শরীরে আরএইচ অ্যান্টিবডি তৈরি করবে।
যখন মা দ্বিতীয় সন্তান বহন করবেন, তখন যদি তার ভ্রূণের ব্লাডগ্রুপ আবার পজেটিভ হয়, তাহলে মায়ের শরীরে আগে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল সেটা প্লাসেন্টার বাধা ভেদ করে বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করবে। আর যখন এটি ভ্রূণের শরীরে ঢুকবে তখন ভ্রূণের লোহিত রক্ত কনিকার সেল ভেঙে যাবে। চিকিত্সা বিদ্যায় এ সমস্যাকে বলা হয় “আরএইচ ইনকমপ্যাটিবিলিটি” ।
আগে কখনও অপারেশন না হয়ে থাকলে অনেক সমস্যা এড়ানো যাবে। শুধু সচেতন থাকতে হবে। স্বামীর ব্লাডগ্রুপ পজেটিভ হলে, বাচ্চা জন্মের পরপরই বাচ্চার ব্লাডগ্রুপ পরীক্ষা করতে হবে। যদি নেগেটিভ হয় মায়ের মতো, তবে কিছু করার দরকার হয় না। আর পজেটিভ হলে “এন্টি ডি ইনজেকশন” নিতে হবে ডেলিভারির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে।
স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই ব্লাড টেস্টের পর পরস্পরকে গ্রহন করুন এবং নিজেদের সন্তানকে নিরাপদ রাখুনর। আরও বিস্তারিত জানতে বাচ্চা ধারণের আগেই বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।